ই-পেপার

ভয়াল ১২ নভেম্বর: আজও স্বজন হারানোর ব্যাথা ভুলেনি উপকূলবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: November 12, 2021

আজ সেই ভয়াল ১২ নভেম্বর। ভোলাসহ উপকূলীয় এলাকার মানুষের কাছে আঁতকে উঠার দিন। ১৯৭০ সালের এই দিনে প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। হাজার হাজার ঘর-বাড়িসহ ওই ঘূর্ণীঝড়ে লাখ লাখ গৃহপালিত পশু-পাখির মৃত্যু হয় (সূত্রঃ দি গার্ডিয়ান, বঙ্গবন্ধুর আত্নজীবনী)। এই দিনটি আসলেই আঁতকে উঠেন উপকূলবাসী। অর্ধশত বছর পরও স্বজন হারানোর ব্যাথা ভুলতে পারেনি তারা। ‘৭০’-এর গোর্কির আঘাতে জলোচ্ছ্বাসে ভোলা জেলার বেশিরভাগ এলাকা নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়ে। শুধু ভোলা জেলায় প্রাণ হারায় ২ লাখ মানুষ। এর মধ্যে বিচ্ছিন্ন মনপুরায় প্রাণ হারায় ২৬ হাজার মানুষ।

এদিকে, একের পর এক জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণীঝড় মোকাবেলা করে আজও ভোলাসহ উপকূলীয় এলাকার মানুষজন বেঁচে থাকতে হচ্ছে। কিন্তু আজও উপকূলীয় অঞ্চলে নিরাপদে বেঁচে থাকার জন্য গড়ে উঠেনি পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেন্টার। তাই পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেন্টার, মাটির কিল্লা ও এই দিনটিকে উপকূল দিবস ঘোষণার দাবি জানিয়েছে উপকূলবাসী।

অপরদিকে, ভোলার ২ লাখ মানুষের মৃত্যু, লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া জনপদের খবর পাঁচদিন পরে জানতে পারে রাজধানীবাসী। তৎকালীন ভোলা জেলা দৈনিক পূর্বদেশের প্রতিনিধি ও বর্তমান ভোলা প্রেসক্লাবের সভাপতি এম. হাবিবুর রহমান তার ক্যামেরায় লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া এই জনপদের ছবি ও সংবাদ চার দিন পর ঢাকায় পৌঁছান, যা পূর্বদেশে ছাপা হলে আঁতকে উঠেন সারা দেশের মানুষ।

ত্রাণ নিয়ে উপকূলে বঙ্গবন্ধু ঃ
৭০-এ গের্কির আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া উপকূলের খবর দৈনিক পূর্বদেশের মাধ্যমে জানতে পরে দেড় তলা লঞ্চ করে ত্রাণ নিয়ে ছুটে আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ভোলার দৌলতখান, তজুমুদ্দিন, মনপুরা ও চরকুকরী মুকরীতে ত্রাণ বিতরণ করেন। এই সময় তার সাথে ছিলেন তৎকালীন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব, সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সহ অন্যান্যরা। মনপুরা উপজেলা তৎকালীন ছাত্রনেতা বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার আবুল কাশে মাতাব্বর জানান, বঙ্গবন্ধু যখন দেড় তলা লঞ্চকরে মনপুরায় ত্রাণ নিয়ে আসেন তখন তাকে স্বাগত জানান জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরীর পিতা মুক্তিযোদ্ধা মরহুম বসরাত উল্লা চৌধুরী। তখন বঙ্গবন্ধু মরহুম বসরাত উল্লা চৌধুরীকে গালি গায়ে দেখে রিজের গায়ের কোট খুলে দেন।
স্বজন হারা রাহেলার স্মৃতিচারণ ঃ

১৯৭০ সালে ১২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ছিল রমযান মাস। সন্ধ্যার সময় বৈরী আবহাওয়া ঘূর্ণীঝড়ে রুপ নেয়। তখনি বন্যার পানি উঠতে শুরু করে। জীবন বাঁচাতে সবাই গাছে আশ্রয় নেয়। মনপুরা উপকূলে সবার মতো সত্তর সালে ২৭ বছরের গর্ভবতী রাহেলা স্বামী, তিন সন্তান, পরিবার-পরিজন নিয়ে গাছে আশ্রয় নেন। ততক্ষণে উপকূলজুড়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হতে থাকে। রাত বাড়ার সাথে সাথে ঘূর্ণীঝড় প্রকট আকার ধারণ করে। এক সময় প্রবল বাতাসে গাছ থেকে পড়ে যান রাহেলা। খেজুর গাছের পাতা ধরে বাঁচার লড়াই করেন তিনি।

একপর্যায়ে অচেনা এক পুরুষের সাথে কাঠের আলমারী ধরে বাঁচার চেষ্ঠা করেন। তখন স্রোতের টানে রাহেলাকে বঙ্গোপসাগের ভাসিয়ে নিয়ে যায়। টানা ৬ দিন সাগরে ভাসার পর রাহেলাকে ভারতীয় জাহাজ উদ্ধার করে চট্রগামে দিয়ে যায়। চট্রগ্রাম হাসপাতালে একমাস চিকিৎসা শেষে বরিশাল হয়ে মনপুরা আসেন তিনি। সমুদ্রে ভাসার সময় তিনি দেখেছেন লাশের মিছিল।

বন্যায় হারানো তিন সন্তানের কথা জানতে চাইলে গুমরে কেঁদে উঠেন রাহেলা। একইভাবে সেই সময়ে সমুদ্রে গাছ ধরে ভেসে ছিলেন হাজিরহাট ইউনিয়নের সাবেক সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য মফিজা খাতুন।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন