ই-পেপার

পুলিশকে ম্যানেজ করে প্রকাশ্যে ঘুরছে সাজাপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা মিঠু

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: November 13, 2021

থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ৭০ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি বরিশাল জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা শহিদুল ইসলাম মিঠু। গত প্রায় ছয় মাস পূর্বে থেকে তিনি এলাকায় ঘুরে বেড়ালেও রহস্যজনক কারণে তাকে গ্রেফতার করছে না পুলিশ। ঘটনাটি বরিশাল জেলার মুলাদী উপজেলার কাজিরচর ইউনিয়নের বজায়শুলি গ্রামের।

অভিযোগ উঠেছে, ‘থানা পুলিশের দুই কর্মকর্তাকে দুই দফায় ৫০ হাজার টাকায় ম্যানেজ করে নিজ এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে মিঠু নামের ওই প্রতারক। তবে মুলাদী থানার অফিসার ইনচার্জ মাকসুদুর রহমান বলেন, আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। আর কোন কর্মকর্তা উৎকোচ গ্রহণ করে থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জানা গেছে, ‘চট্টগ্রামে চাকরি করা অবস্থায় আব্বাস ট্রেডিং এর মালিক এম.ডি আব্বাস উদ্দিন এর নিকট থেকে একটি চেকের বিনিময়ে ৭০ লাখ টাকা ধার নেয় বরিশালের মুলাদী উপজেলার বজায়শুলী গ্রামের সালাম বেপারীর ছেলে মিঠু। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা আত্মসাত করে স্ত্রী আখিকে নিয়ে পালিয়ে বরিশালে আসেন।

ওই ঘটনায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন আদালতে মামলা করেন আব্বাস উদ্দিন। এর পূর্বে তাকে আইনি নোটিশ দিলেও তিনি তার কোন জবাব দেননি। পরবর্তীতে মিঠু পলাতক থাকাবস্থাতে জালিয়াতি এবং অর্থ আত্মসাতের মামলার বিচার সম্পন্ন হয়। ওই মামলায় তাকে এক বছরের সাজা প্রদানের পাশাপাশি আত্মসাতকৃত টাকা ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেন আদালত।

পাশাপাশি তাকে গ্রেফতারের জন্য পরোয়ানা জারি করা হয়। যা তামিলের জন্য পাঠানো হয় চট্টগ্রাম কোতয়ালী এবং বরিশালের মুলাদী থানায়। গত প্রায় ছয় মাস পূর্বে ওয়ারেন্টের নথি মুলাদী থানায় আসলেও তাকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ।

মুলাদীর বাসিন্দা এবং মিঠুর ঘনিষ্টজন জানিয়েছেন, প্রায় পাঁচ-ছয় মাস পূর্বে ওয়ারেন্টের নথি থানায় আসলে ওয়ারেন্ট তামিলের দায়িত্ব পান মুলাদী থানা পুলিশের দুই কর্মকর্তা। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তারা গ্রেফতার করেননি প্রতারনা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত মিঠুকে। মিঠুর ঘনিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ‘মুলাদী থানার দুজন পুলিশ কর্মকর্তা মিঠুকে গ্রেফতার না করার শর্তে দুই দফায় ২০ হাজার এবং ৩০ হাজার করে মোট ৫০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহনের মাধ্যমে রফাদফা করেছে।

সূত্র জানায়, মিঠু দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে বর্তমানে মুলাদী উপজেলার পোস্ট অফিসের পেছনে একটি দ্বিতল ভবনের দ্বিতীয় তলার ফ্লাট ভাড়া নিয়ে থাকেন। তার বাবার বাড়ি মুলাদীর কাজিরচর ইউনিয়নের বজায়শুলি গ্রামে। বেসিরভাগ সময় মিঠু থাকেন বরিশাল নগরীর কাশিপুর শিতারাম দিঘি সংলগ্নে সাবেক এক ব্যাংক কর্মকর্তার মালিকানাধিন বাড়ির তৃতীয় তলার ফ্লাটে।

মাঝে মধ্যে থানা পুলিশ মিঠুর মুলাদীর ভাড়া বাসায় লোক দেখানো অভিযান করেন। কিন্তু পুলিশ বাসায় পৌঁছানোর আগেই মিঠু তার বরিশালের ভাড়া বাসায় আত্মগোপন করেন। এভাবেই গ্রেফতারী পরোয়ানা থাকা সত্যেও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বরিশাল জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মিঠু।

এ প্রসঙ্গে মুলাদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘এমন কোন গ্রেফতারী পরোয়ানা মুলাদী থানায় আসলে অবশ্যই আসামিকে গ্রেফতার করা হবে। তবে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও গত ছয় মাসেও তাকে গ্রেফতার না করার কারণ জানতে চাইলে কোন সদুত্তোর দিতে পারেননি ওসি। অবশ্য তিনি বলেন, ‘থানার কোন পুলিশ কর্মকর্তা উৎকোচ গ্রহণ করে থাকলে অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন