ই-পেপার

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব নিত্যপণ্যে, আটায় কৃত্তিম সংকট

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: August 9, 2022

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে নিত্যপণ্যের বাজারে। তেলের দাম বাড়ায় একদিনের ব্যবধানেই বরিশালের বাজারে বেড়ে গেছে দ্রব্যমূল্য। বিশেষ করে চাল, চিনি, আটা-ময়দা এবং ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে পাইকারী এবং খুচরা বাজারে। এ নিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের মানুষের কপালে। তারা দাবি তুলেছেন ভর্তুকি দিয়ে হলেও নিত্যপণ্যের মূল্য কমানোর।

মঙ্গলবার বরিশাল নগরীর বিভিন্ন পাইকারী এবং খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ‘প্রতি কেজি চালের মূল্য সর্বনিম্ন ১টা ৬০ পয়সা থেকে শুরু করে ২টা ৮০ পয়সা পর্যন্ত বেড়েছে। ভোজ্য তেলের প্রতি লিটারে মূল্য বেড়েছে ৩ থেকে ৪টাকা পর্যন্ত। এছাড়া প্রতি কেজি আটায় বেড়েছে ৫-৬ টাকা। যদিও আটার মূল্য বৃৃদ্ধির কারণ স্থানীয় মিল মালিকদের সিন্ডিকেটকে দায়ি করছেন ব্যবসায়ীরা।

নগরীর বাজার রোডের মেসার্স এম ট্রেডিং এর সত্ত্বাধিকারী মিন্টু মন্ডল জানান, ‘গত শুক্রবার রাতে সব ধরনের জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা করেছে সরকার। অস্বাভাবিক হারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব নিত্যপন্যের বাজারেও পড়েছে। শুক্রবারের পর থেকেই বিভিন্ন পণ্যের বাজারে মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে পাইকাররা।

তিনি জানান, ‘গত বৃহস্পতিবাে ৫০ কেজির চিনির বস্তা পাইকারী কিনেছে ৩ হাজার ৯২০ টাকায়। কিন্তু মঙ্গলবার চিনির মূল্য দাঁড়িয়েছে চার হাজার টাকায়। একইভাবে ৫০ কেজির আটা এবং ময়দার বস্তার মূল্য বৃহস্পতিবার ছিল ১ হাজার ৯০০ টাকা। বর্তমানে একশত টাকা বেড়ে ২ হাজার টাকা হয়েছে। এছাড়া এক ব্যারেল (১৮৪ কেজি) ভোজ্য তেলের মূল্য ৮শত টাকা বেড়ে ৩১ হাজার ৮০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

অপরদিকে, বাজার রোডের ফরিয়াপট্টির চাল ব্যবসায়ী মেসার্স মেহেন্দিগঞ্জ বাণিজ্যালয়ের সত্ত্বাধিকারী সামছুল আলম জানিয়েছেন, ‘জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে পরিবহন ভাড়া বেড়েছে। এ কারণে প্রকারভেদে চালের মূল্যও বেড়েছে। প্রতি কেজিতে চালের মূল্যে সর্বনিম্ন ১ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ২ টাকা ৮০ পয়সা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রতি ২৫ কেজির বুলেট চালের বস্তার মূল্য এক হাজার ৬০ টাকা থেকে বেড়ে ১২০০ টাকায় বিক্রি করছে খুচরা ব্যবসায়ীরা। একইভাবে দাদা মিনিকেট বিক্রি করা হচ্ছে ১৭শ টাকায়। গত বৃহস্পতিবার যা বিক্রি হয় এক হাজার ৬৩০ টাকায়।

এদিকে, ‘ফরিয়াপট্টির ব্যবসায়ী ঊষা ট্রেডার্স এর মালিক সঞ্জিব দেবনাথ বলেন, ‘জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করায় ভোজ্য তেল, চাল, চিনির দাম বেড়েছে। কিন্তু আটা-ময়দার দাম বেড়েছে বরিশালের মিল মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণে। তারা কৃত্তিম সংকট তৈরি করে রেখেছে। এ কারণে বাজারে আটা-ময়দার মূল্য বেড়েছে। সরবরাহ কম থাকায় প্রতি কেজি আটা এবং ময়দা ৫-৬ টাকা বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। অথচ ভোক্তা অধিকার বা প্রশাসন এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

তিনি বলেন, ‘বরিশালে চারটি আটার মিল রয়েছে। তারা সিন্ডিকেট করে মূল্য বৃদ্ধি করে বসে আছে। ব্যবসায়ীরা যে মূল্য দিতে চাচ্ছে তাতে রাজি হচ্ছে না বরিশালের মিল মালিকরা। যে কারণে বর্তমানে বরিশালের বাজারে স্থানীয় মিলের আটা নেই বললেই চলে। এখন ঢাকার মিলের আটা বিক্রি হচ্ছে। ঢাকার মিলের আটা না থাকলে বরিশালের বাজার আটা-ময়দা শূন্য হয়ে যেতো বলে দাবি এই ব্যবসায়ীর।

এদিকে, ‘জ্বালানি তেলের কারণে নিত্যপন্যের মূল্য বৃদ্ধিতে অসহায় হয়ে পড়েছেন নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের মানুষেরা। বাজার রোডে কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতা জহির বলেন, ‘আমি একটি প্রাইভেট কোম্পানি চাকরি করি। সরকার হুট করে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেলে নিত্যপণ্যের বাজারে প্রভাব পড়াটাই স্বাভাবিক। সরকার আমাদের মত নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের মানুষের কথা না বেভেইে মূল্য বাড়িয়েছে। সরকারের উচিত ভর্তুকি দিয়ে হলেও জ্বালানি তেল এবং নিত্যপন্যের মূল্য কমানো। না হলে আমাদের মতো গরিবরা না খেয়ে মারা যাবে।’

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন