ই-পেপার

‍এবার রাজশাহীর মেয়র আব্বাসকে অব্যাহতি

বিএসএল নিউজ ডেস্ক | আপডেট: November 26, 2021

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য পদ থেকে কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দলের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করতে কেন্দ্রে সুপারিশ করা হয়েছে।

একই অভিযোগে পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক পদ থেকে তাকে স্থায়ী বহিষ্কার করতে কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) বিকালে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে জরুরি সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভা শেষে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আমানুল হাসান দুদু, জাকিরুল ইসলাম সান্টু, আইনজীবী শরিফুল ইসলাম, অধ্যক্ষ একরামুল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আয়েন উদ্দিন এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক লায়েব উদ্দিন লাবলু, প্রভাষক আসাদুজ্জামান আসাদ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জিনাতুন নেসা তালুকদারসহ ৬০ জন সদস্য। সভায় মেয়র আব্বাসের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়। সেই সঙ্গে এ ঘটনার জন্য তীব্র নিন্দা জানানো হয়।

এদিকে, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণকে কেন্দ্র করে কটূক্তির ঘটনায় মেয়র আব্বাস আলীর শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল এবং তার কুশপুত্তলিকা দাহ করেছেন মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীরা।

‘উন্নয়নের অভিযাত্রায় রাজশাহী’ লেখা ব্যানারে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মহানগরীর আলুপট্টি মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি মহানগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সাহেব বাজার জিরো পয়েটে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে মেয়র আব্বাসের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।

এ সময় মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রকি কুমার ঘোষ, বর্তমান সভাপতি নূর মোহাম্মদ সিয়াম, সাধারণ সম্পাদক ডা. সিরাজুল মবিন সবুজ, যুগ্ম সম্পাদক হাসান রেজা, সাংগঠনিক সম্পাদক রাসিক দত্ত ও মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মারুফ হোসেনসহ ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

পাশাপাশি মেয়র আব্বাস আলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন কাটাখালী পৌরসভার কাউন্সিলররা। শুক্রবার সকালে পৌর ভবনে সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন তারা।

এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তি করায় শুক্রবার পৌর ভবনে প্রতিবাদ সভা করেন কাউন্সিলররা। এরপর তারা সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। কাউন্সিলররা বলেন, বছরে সাড়ে তিন কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়। এখন তহবিলে এক কাপ চা খাওয়ার টাকা নেই। সব লুটেপুটে খেয়েছেন মেয়র।

তিন নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মঞ্জুর রহমান বলেন, মেয়র আব্বাস আলী কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রায়ই গালিগালাজ করেন। জোরপূর্বক সভা ও অন্যান্য কাগজে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করতেন। গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পসহ অন্যান্য যাবতীয় কাজ মেয়র তার আত্মীয়-স্বজন ও পছন্দের লোকজনকে দিতেন। তার আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে চার জনের নামে লাইসেন্স আছে পৌরসভায়। মেয়র তাদের নামে কাজ নিয়ে নিজেই করতেন। অন্য ঠিকাদারদের লাইসেন্স করতে দিতেন না।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার সাদাত, সিরাজুল ইসলাম, মঞ্জুর রহমান, ইয়াছিন মোল্লা, বোরহান উদ্দীন রাব্বানী, মনিরুজ্জামান মনির, আব্দুল মজিদ, এনামুল হক, সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হোসনে আরা বেগম প্রমুখ। তারা মেয়রের অপসারণ চান।

অপরদিকে, মেয়র আব্বাস আলীকে অপসারণে অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছেন কাউন্সিলররা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পৌরসভা ভবনের সভা কক্ষে কাউন্সিলরদের জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আব্বাস আলীকে মেয়র পদ থেকে অপসারণের জন্য অনাস্থা প্রস্তাব আনেন নারী কাউন্সিলর হোসনে আরা। পরে সর্বসম্মতিক্রমে অনাস্থা প্রস্তাব পাস হয়।

৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল মজিদ জানান, তার সভাপতিত্বে কাউন্সিলরদের জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে মেয়র আব্বাসকে অপসারণে অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হয়। এরপর মেয়র আব্বাসকে অপসারণের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর লেখা অনাস্থা প্রস্তাবের আবেদনে ১২ জন কাউন্সিলর স্বাক্ষর করেন। এরপর রাত সাড়ে ১০টার দিকে জেলা প্রশাসকের বাসভবনে গিয়ে আবেদন জমা দেওয়া হয়। এ সময় ১০ জন কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন। অসুস্থ থাকায় দুই জন আসেননি।

মঙ্গলবার সকালে ফেসবুকে ১ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের একটি অডিও ছড়িয়ে পড়ে। অডিওতে মেয়র আব্বাসকে বলতে শোনা যায়, ‘আমাদের যে অংশটা হাইওয়েতে, সিটি গেট আমার অংশে। ফার্মকে দিয়েছি তারা বিদেশি স্টাইলে সাজিয়ে দেবে, ফুটপাত, সাইকেল লেন টোটাল আমার অংশটা। কিন্তু একটু থেমে গেছি গেটটা নিয়ে। একটু চেঞ্জ করতে হচ্ছে, যে ম্যুরালটা দিয়েছে বঙ্গবন্ধুর। এটা ইসলামি শরিয়ত অনুপাতে সঠিক নয়। এ জন্য আমি ওটা থুব না। সব করবো, যা কিছু আছে। খালি শেষ মাথাতে যেটা ওটা।’

আব্বাস আলীকে অডিওতে আরও বলতে শোনা যায়, ‘আমি দেখতে পাচ্ছি, আমাকে যেভাবে বুঝাইল, ম্যুরালটা দিলে ঠিক হবে না। আমার পাপ হবে। এটা কেন দেবো, দেবো না। আমি তো কানা না, আমাকে যেভাবে বোঝাইছে, তাতে আমার মনে হয়েছে যে ম্যুরালটা হলে আমার ভুল হবে। এ জন্য চেঞ্জ করছি। এই খবরটাও যদি আবার যায়, তাহলে আমার রাজনীতির বারোটা বাজবে, আরে যে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল দিতে চাচ্ছে না।

তাহলে বঙ্গবন্ধুকে খুশি করতে গিয়ে আল্লাহকে নারাজ করবো নাকি। এটা নিয়ে রাজনীতি করবে শিউর। রাজনীতি করলে কিছু করার নাই। তাই বলে মানুষকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করা যাবে না তো।’ অডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর রাজশাহীতে তোলপাড় শুরু হয়।

ইতোমধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মেয়র আব্বাসের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আর উপজেলা আওয়ামী লীগ আব্বাসকে পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন