ই-পেপার

সন্তান জন্ম দিয়েই পরীক্ষার হলে মা

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: November 22, 2021

সন্তান জন্ম দেয়ার কয়েক ঘন্টার মাথায় কেন্দ্রে হাজির হয়ে এসএসসি পরীক্ষা দিলেন এক কিশোরী মা। আর এই ঘটনায় গোটা এলাকাজুড়ে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। তার এই মানসিক মনবলের কারণে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন স্থানীয়রা। তবে স্কুল ছাত্রীর সন্তান প্রসবের ঘটনায় বাল্য বিয়ের বিষয়টি সামনে বেড়িয়ে আসায় কিছুটা বিব্রত তার অভিভাবকরা।

ঘটনাটি গত রোববার বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার চাখার ইউনিয়নে ঘটেছে। দোলা আক্তার নামের ওই কিশোরী মা একই ইউনিয়নের খলিশাকোঠা গ্রামের মো. দুলাল হাওলাদারের কন্যা এবং চাখার ওয়াজেদ মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।

চাখার ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) মোঃ ফারুক হোসেন স্বজনদের বরাত দিয়ে জানান, প্রসুতি দোলা আক্তারেরে আগেই বিয়ে হয়েছিলো। তার স্বামী ঢাকায় চাকুরি করেন। সে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। রোববারের আগের পরীক্ষাগুলো সে ঠিকভাবেই দিয়েছে।

তবে রোববারের পরীক্ষা শুরুর কয়েকঘন্টা আগে, সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৭ টার দিকে প্রসব বেদনা শুরু হলে চাখার ১০ শয্যা হাসপাতালের একজন সেবিকার সহযোগিতায় দোলা একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তান জন্ম দেয়।

এর কিছুক্ষন পর দোলা শারীরিকভাবে সুস্থবোধ করলে তিনি এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। পরে পরীক্ষা পরিচালনা সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করে দোলা যথাসময়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। বর্তমানে ছেলে সন্তান ও মা দুজনেই সুস্থ আছেন বলে জানান তিনি।

চাখার ফজলুল হক ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক ও এসএসসি পরীক্ষার সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র সচিব মোঃ জিয়াউল হাসান জানান, চাখার হাসপাতালের একজন নার্স ও দোলার স্বজনরা পরীক্ষা শুরুর কিছু সময় আগে বিষয়টি আমাদের অবগত করেন।

তারা যখন আমাদের বিষয়টি জানান তার অল্প কিছু সময় আগেই নাকি ওই শিক্ষার্থী ছেলে সন্তান প্রসব করেছে। এমন কথা শুনে তার শারীরিক কথা বিবেচনা করে প্রথমে আমরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করানোর জন্য অভিভাবকদের বলি। কারণ বসে পরীক্ষা দিলে যদি তার কোন ধরনের সমস্যা হয় সেটা বিপদজনক হতে পারে।

তিনি বলেন, এরপর ওই শিক্ষার্থী নিজেকে সুস্থ দাবি করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জোর আকুতি জানায়। পরে তার এক খালাতো বোনকে সাথে নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসে দোলা। এরপর সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দেড়ঘন্টার নির্ধারিত সময়ে ভূগোল ও পরিবেশ বিষয়ের পরীক্ষায় স্বাভাবিক ভাবেই অংশগ্রহণ করে ওই শিক্ষার্থী।

শিক্ষক জিয়াউল হাসান বলেন, ‘দোলা নামের মেয়েটি মেধাবী। তার মানসিক মনোবল দেখে পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট সকলেই অবাক হয়েছি। পরে খোঁজ নিয়ে যতটুকু জেনেছি পরীক্ষার্থীর পিতার পরিবার তেমনভাবে স্বচ্ছল নয়। ক্লাশ নাইনে থাকতে ওই পরীক্ষার্থীর বিয়ে হয়।’

এদিকে, স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে পরীক্ষার্থীর স্বামী কেন্দ্রের বাহিরে অবস্থান করছিলেন এবং তার অন্য স্বজনরা সদ্য ভূমিষ্ট সন্তানকে তাদের কাছে রাখেন।

উল্লেখ্য, দোলা আক্তার চাখার ওয়াজেদ মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের হয়ে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করছিলেন। সে চাখারের খলিশাকোঠা গ্রামের মোঃ দুলাল হাওলাদার এর মেয়ে। স্কুলের গন্ডি পার হতে না হতেই পরিবারের সম্মতিতে পার্শপর্তী দাসের হাট (হরিদ্রাপুর) গ্রামের মোঃ ইউসুফ আলীর ছেলে আকাশের সাথে বিয়ে হয় তার।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন