ই-পেপার

যুদ্ধ না, আমরা শান্তি চাই : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: May 29, 2022

বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ আরো জোরালো ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুদ্ধ না, আমরা শান্তি চাই। সংঘাত না, আমরা উন্নতি চাই। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সব সময় চায় শান্তি প্রতিষ্ঠা হোক। যুদ্ধ না, আমরা শান্তি চাই। সংঘাত না, আমরা উন্নতি চাই। জাতির পিতার শান্তি সেনানীরূপে ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় ‘ব্লু হেলমেট’ পরিবারের সদস্য হয়। আজ আমরা সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে গৌরবের ৩৪ বছর উদযাপন করছি।

২৯ মে (রবিবার) আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কেবল বাঙালি জাতিরই নন, তিনি ছিলেন বিশ্বের নির্যাতিত, নিপীড়িত ও শোষিত মানুষের মুক্তি ও শান্তির দূত।

তিনি তার এক ভাষণে বলেছিলেন, বিশ্ব আজ দুভাগে বিভক্ত—শোষক ও শোষিত। আমি শষিতের পক্ষে। তিনি সব সময় শোষিত, নির্যাতিত, নিপীড়ত মানুষের পক্ষে কাজ করেছেন। বাংলাদেশের মানুষকে শোষণ, বঞ্চনা, নির্যাতন, নিপীড়ন থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ এবং স্বাধীন জাতি হিসেবে আমাদের প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। বিশ্ব শান্তির জন্য কাজ করেছিলেন বিশ্ব শান্তি পরিষদ জাতির পিতাকে ‘জুলিও কুরি শান্তি পুরস্কার’-এ ভূষিত করে।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭৪ সালে আমরা জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করি এবং জাতিসংঘে তিনি ২৫ সেপ্টেম্বর ভাষণ দেন। সেই ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি বিশ্বের সর্বত্র শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অব্যাহত সমর্থনের বিষয়ে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরীতা নয়’ এই নীতি তিনি ঘোষণা করেছিলেন। যে নীতি আমরা এখনো মেনে চলি।

সরকারপ্রধান বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে গত ৩৪ বছর ধরে বাংলাদেশের প্রতিটি শান্তিরক্ষী তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব দক্ষতা ও সফলতার সাথে পালন করে যাচ্ছেন। সমগ্র বিশ্বে শান্তিরক্ষায় সক্রিয় অংশগ্রহণকারী হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান সর্বজনবিদিত। ৯৬ সালে প্রায় ২১ বছর পর আমি যখন সরকার গঠন করি, তখনই জানি আমাদের দেশ থেকে শান্তিরক্ষী মিশনে আমাদের সদস্যরা যাচ্ছেন; সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনী থেকে। তাই তারা যাতে উপযুক্তভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন এবং তাদের প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য, যিনি যে দেশে যাচ্ছেন সেই দেশ সম্পর্কে জানা, সেখানে কী করণীয় সে সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নেওয়া এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেজন্য আমি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেই।

তিনি বলেন, জাতিসংঘ মিশনে কার্যকর অংশগ্রহণ বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমাদের অবস্থানকে সুসংহত করেছে। একইসাথে সামরিকভাবে শক্তিশালী দেশগুলোর সাথে আমাদের দেশের পারস্পরিক কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এছাড়াও, শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা দেশের জন্য বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছেন, যা আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বর্তমানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনগুলোতে শান্তিরক্ষীদের বহুমাত্রিক ও জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা অপারেশনে এই নতুন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় আমরা আমাদের শান্তিরক্ষীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জামাদি দিয়ে প্রস্তুত করে তুলছি। ‘পিপল পিস প্রোগ্রেস: দ্য পাওয়ার অব পার্টনারশিপ’ ২০২২ সালের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসের প্রতিপাদ্যকে আমরা সামনে রেখে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ আরো জোড়ালো ভূমিকা পালন করবে সেই অঙ্গীকার আমরা করছি।

তিনি বলেন, এ মুহূর্তে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় ২২১টি দেশের ৭৫ হাজার ৫১৬ জন শান্তিরক্ষী নিয়োজিত রয়েছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশের ৬ হাজার ৮২৫ জন শান্তিরক্ষী রয়েছেন যা বিশ্বে নিয়োজিত সর্বমোট শান্তিরক্ষীর ৯ দশমিক ২ শতাংশ। বর্তমানে বাংলাদেশের ১১৯ জন নারী শান্তিরক্ষী বিশ্ব শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত আছেন। তিনি আরো বলেন, আমাদের শান্তিরক্ষীরা ৩৪টি দেশে ৫৫টি মিশন সফলতার সাথে সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে ৯টি মিশনে আমাদের শান্তিরক্ষীরা নিয়োজিত রয়েছেন।

শান্তিরক্ষা মিশনে শহীদদের স্মরণ ও তাদের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে তিনি বলেন, আমি জানি আপনজন হারানোর বেদনা কত কঠিন, কত নির্মম। এ পর্যন্ত শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে আমাদের সর্বমোট ১৬১ জন শান্তিরক্ষী শহীদ হয়েছেন। এর মধ্যে গত এপ্রিল পর্যন্ত বিগত এক বছরে দুইজন শান্তিরক্ষী শহীদ হয়েছেন। এ বছর দুইজন শহীদ শান্তিরক্ষী পরিবার এবং ১৪ জন আহত শান্তিরক্ষীকে সম্মাননা প্রদান করা হলো। আমি তাদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন