ই-পেপার

বিসিসি মেয়রকে লিগ্যাল নোটিশ: অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হলে ‍আইনি ব্যবস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: January 18, 2022

অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ এনে বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহসহ তিন কর্মকর্তাকে দেয়া সাত কাউন্সিলের আইনি নোটিশের জবাব দিয়েছে নগর কর্তৃপক্ষ। জবাবে কাউন্সিলরদের উত্থাপিত অভিযোগ অসত্য এবং ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি নোটিশ দাতা কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে সিটি কর্পোরেশন ও মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ’র বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের পাল্টা অভিযোগ করা হয়েছে। তাই লিগ্যাল নোটিশে উল্লেখিত অভিযোগের প্রমাণ দিতে না পারলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে জবাবে।

গত ১৬ জানুয়ারি সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক আহমেদ বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট জগদীশ চন্দ্র সরকারের মাধ্যমে নোটিশ প্রদানকারী অ্যাডভোকেট মো. আজাদ রহমানের কাছে এই জবাব প্রদান করেন। নোটিশের জবাব ডাক যোগে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস।

এর আগে গত ২ জানুয়ারি আইনজীবীর মাধ্যমে সিটি মেয়র, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সচিবের বিরুদ্ধে ৬টি অভিযোগ উল্লেখ করে লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করেন বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম অনুসারী সাত কাউন্সিলর। নোটিশ গ্রহিতাদের ১৫ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। উল্লেখিত সময়ের মধ্যেই নোটিশের জবাদ দিয়েছে নগর কর্তৃপক্ষ।

নোটিশ প্রদানকারী সাত কাউন্সিলর হলেন- সিটি কর্পোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. হুমায়ুন কবির, চার নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলাম বাদশা, ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ফরিদ আহম্মদ, ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান, ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আমির হোসেন বিশ্বাস, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শরীফ মো. আনিসুর রহমান (আনিস শরীফ) ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এনামুল হক বাহার।

লিগ্যাল নোটিশে তারা উল্লেখ করেন, ‘সিটি কর্পোরেশনের স্থায়ী বিভিন্ন কর্মকর্তাদের বে-আইনিভাবে ওএসডি রেখে মাস্টাররোলে অদক্ষ জনবল নিয়োগ দিয়ে সিটি কর্পোরেশন পরিচালনা করা হচ্ছে। মাস্টাররোলের কর্মচারীদের কোন আইনি দায়বদ্ধতা না থাকায় তাঁদের কারণে জনগণের ক্ষতি হতে পারে।

আরও বলা হয়, সরকারি আদেশ-নির্দেশ অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশন পরিচালনার নিয়ম থাকলেও তা মেয়রসহ নোটিশ পাওয়া তিনজন খামখেয়ালি করে কাজ চালাচ্ছেন। এতে কর্পোরেশনের স্থবিরতা ও জন-অসন্তোষ বাড়ছে। একইভাবে হাটবাজার টেন্ডার প্রকিয়ায় না দিয়ে নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের ইজারা দেওয়া হয়েছে বে-আইনিভাবে। ফলে ইজারাদারদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ জনগণ। এছাড়া নোটিশ প্রদানকারী সাত কাউন্সিলরকে প্রাপ্ত সম্মানি সঠিকভাবে প্রদান না করা এবং সিটি কর্পোরেশনের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা প্রদানের কারণ জানতে চাওয়া হয় নোটিশের মাধ্যমে।

আইনি নোটিশের এসব প্রশ্নের জবাব দিয়েছে নগর কর্তৃৃপক্ষ। অভিযোগে কাউন্সিলরদের ভাতা সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে, ‘সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরদের সম্মানী ভাতা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ৪৩ হাজার ৫০০ টাকা প্রদান করা হচ্ছে। ‍এর সাথে যাতায়াত ও যোগাযোগ বাবদ ৬ হাজার ৫০০ টাকা প্রদান করা হয়। যেসকল কাউন্সিলর খরচের ভাউচার জমা প্রদান করেছেন তাদেরকে ওই টাকা প্রদান করা হয়েছে। নোটিশ দাতারা যাতায়াত ও যোগাযোগের ভাউচার দাখিল না করায় তাদের ৬ হাজার ৫০০ টাকা প্রদান করা হয়নি।

দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রথম সাধারণ সভায় গনমাধ্যমকর্মী এবং সুশীল সমাজ উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় কাউন্সিলরদের সিটি কর্পোরেশনের যাওয়া নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত সভার কার্যবিবরনীতে উল্লেখ নেই। এছাড়া নগর ভবনের কাউন্সিলরদের বসার জন্য আলাদা কক্ষের ব্যবস্থা রয়েছে। নোটিশদাতা কাউন্সিলরদের বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে যাওয়া নিষিদ্ধ মর্মে উক্তিটি সম্পর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রনোদিত।

ট্যাাক্স সংক্রান্ত তৃতীয় অভিযোগের জবাবে বলা হয়েছে, সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান চতুর্থ পরিষদ কোন ধরনের হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি করেনি। জনস্বার্থ উপেক্ষা করে হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির বিষয়ে মনগড়া মন্তব্য উসকানিমূলক, মিথ্যা ও বানোয়াট।

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত ‍এবং ওএসডি করণ সংক্রান্ত চতুর্থ প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে, ‘সিটি কর্পোরেশনের কতিপয় অসাধু স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে জনস্বার্থে ও সিটি কর্পোরেশনের কাজের স্বার্থে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশাসনিক শাখায় নিয়োজিত করা হয়েছে।

তাছাড়া সাবেক প্রধান প্রকৌশলী দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তিনি ইতিপূর্বে জেল খেটেছেন। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের কাজের স্বার্থে চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিতে চুক্তিভিত্তিক কিছু জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

পঞ্চম প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন আইন) ২০০৯ অনুযায়ী এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী পরিচালিত হয়। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে প্রেষনে একজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (উপ-সচিব), সচিব (সিনিয়র সহকারী সচিব), বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট (সহকারী সচিব) পদমর্যাদার কর্মকর্তাগণ আইনের বিষয়টি দেখেন।

নোটিশের সর্বশেষ ছয় নম্বর অভিযোগের জবাবে বলা হয়েছে, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের হাট বাজার সমূহ বিধি অনুযায়ী জাতীয় এবং স্থানীয় পত্রিকায় যথা বিগত ২০২১ সালের ১২ মার্চ দৈনিক পরিবর্তন, দৈনিক মতবাদ এবং দৈনিক আজকের বার্তা পত্রিকায় বিজ্ঞ‍াপনের মাধ্যমে ইজারা প্রদান করা হয়। সর্বোচ্চ দরদাতারাই হাট বাজার সমূহের ইজারা পেয়ে থাকেন। এই ইজারা পূর্বের তুলনায় স্বচ্ছ হওয়ায় আগের চেয়ে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেয়েছে।

লিগ্যাল নোটিশের জবাবপত্রের চতুর্থ পাতায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘লিগ্যাল নোটিশ প্রদানকারী ব্যক্তিগন ২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বর পরিষদের ১৬তম মাসিক সাধারণ সভায় উপস্থিত ছিলেন। সাধারণত মাসিক সাধারণ সভায় কাউন্সিলরগণ জনস্বার্থে জনগণের সুবিধা অসুবিধার বিষয় উত্থাপন সাপেক্ষে সমস্যার সমাধান করে থাকেন। কিন্তু লিগ্যাল নোটিশে উত্থাপিত অভিযোগের একটি বিষয়েও নোটিশ প্রদানকারীরা সাধারণ সভায় উত্থাপন করেননি।

১৬তম মাসিক সাধারণ সভার ভিডিও চিত্র ধারণ করা ‍আছে ‍উল্লেখ করে অভিযোগের জবাবে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দাবি করেছেন, লিগ্যাল নোটিশ দাতাগণ অসৎ উদ্দেশ্যে প্রণোদিত হয়ে সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে হেয় প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে উক্ত লিগ্যাল নোটিশে মিথ্যা ও মনগড়া তথ্য প্রদান করেছেন। লিগ্যাল নোটিশে বর্ণিত অভিযোগ সিটি কর্পোরেশনের ভাবমূর্তি হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য করা হয়েছে।

তাই নোটিশ দাতাগন তাদের লিগ্যাল নোটিশের অভিযোগ যথাযথ প্রশাণ করতে ব্যর্থ হলে তাদের বিরুদ্ধে সিটি কর্পোরেশনের এবং মেয়রের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য উপযুক্ত আদালতে আশ্রয় নিতে বাধ্য থাকবেন বলে নোটিশের জবাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন