ই-পেপার

বাকেরগঞ্জে যুবককে কুপিয়ে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেফতার ১

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: January 5, 2022

জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের মনির মল্লিক (৩৪) নামের এক যুবককে কুপিয়ে এবং পিটিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষরা। পাশাপাশি নিহতের বাড়ি-ঘরে হামলা এবং ভাঙচুর করে পরিবারের তিন নারী সদস্যকে আহত করেছে তারা। নিহত মনির মল্লিক ভরপাশা গ্রামের মৃত: চাঁন মল্লিকের ছেলে।

নিহতের ঘটনায় সোহরাব মৃধা নামের একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পাশাপাশি এই ঘটনায় পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের ভাই বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। বাকি আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জ।

হামলার ঘটনায় আহত তিন নারী হলেন- ইতি বেগম (১৮), নাজমা বেগম (৩৪) ও রিমি আক্তার (২৪)। এদের মধ্যে নিহতের ছোট ভাই শামিম মল্লিকের স্ত্রী ইতি বেগমকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অপর দুজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

পুলিশ এবং আহত সূত্রে জানা গেছে, ‘মনির মল্লিক ও প্রতিপক্ষ হাসেম মল্লিকদের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে পর্যায়ে একাধিকবার সালিশ মীমাংসার প্রস্তাব দেয়া হলেও প্রতিপক্ষ হাসেম মল্লিকরা তা প্রত্যাখ্যান করে। পরে মনির মল্লিকদের পক্ষ থেকে বাকেরগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

অভিযোগের সূত্র ধরে বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশ উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে বিরোধীয় জমির জরিপ শেষে সালিশ-মিমাংসায় বসেন। কিন্তু সালিশ মনমত না হওয়ায় তা প্রত্যাখ্যান করেন প্রতিপক্ষরা। এজন্য মনির মল্লিকদের পক্ষ থেকে হাসেম মল্লিকদের বিরুদ্ধে সাত ধারায় একটি মামলা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হন প্রতিপক্ষরা। এর জের ধরে প্রায় মাস খানেক পূর্বে মনিরের বড় ভাই বাদল মল্লিককে মারধর করেন তারা।

এ ঘটনায় বাকেরগঞ্জ থানায় আরও একটি অভিযোগ দায়ের করেন বাদল। ওই ঘটনায় পুলিশ উভয় পক্ষকে থানায় ডেকে মিমাংসার চেষ্টা করলেও তা প্রত্যাখ্যান করে থানা থেকে বেরিয়ে যান প্রতিপক্ষরা। এমনকি ওই ঘটনার পর থেকে রাতের আধারে মনির মল্লিকদের বসতঘরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভয়ভীতি সৃষ্টি করে আসছিলেন তারা।

এর ধারাবাহিকতায় গত ২ জানুয়ারি রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মনির মল্লিক বাকেরগঞ্জের সীমান্তবর্তী পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার চরখালী বাজারে গেলে সেখানে প্রতিপক্ষ হাসেম মল্লিক, হয়দার মল্লিক, কামাল মল্লিক, স্বপন মৃধা, সোহরাব মৃধা, শমসের মল্লিক, ওমর ফারুক ও হাসেম মল্লিকসহ ১৫-২০ জন ধারালো অস্ত্র এবং লাঠিসোটা নিয়ে তার ওপর হামলা করে। তারা মনির মল্লিককে কুপিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তার ওপর ফেলে রেখে তার বাড়িতে গিয়ে হামলা এবং লুটপাট করে। এতে বাধা দিতে গেলে গৃহবধূ ইতি বেগম, নাজমা বেগম ও রিমি আক্তারকে গুরুতর আহত করেন।

এদিকে, ধারালো অস্ত্র এবং লাঠির আঘাতে গুরুতর আহত মনির মল্লিককে মুমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন স্থানীয়রা। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ৪ জানুয়ারি রাত ১১টার দিকে তাকে উন্নত চিকিৎসার দিকে ঢাকায় প্রেরণ করেন চিকিৎসকরা। ঢাকা নেয়ার পথে রাতে পৌনে ২টার দিকে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষনিক তাকে মাদারীপুর হাসপাতালে নিয়ে যান স্বজনরা।

এসময় সেখানকার দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন এবং মৃতদেহ বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। সবশেষ বুধবার বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের মর্গে নিহতের মৃতদেহের ময়না তদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে।

এদিকে, নিহতের স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে প্রতিপক্ষরা তাদের ওপর পাল্টা হামলার নাটক সাজিয়ে সোহরাফ মৃধা নামের একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। তবে হাসপাতালে চিকিৎসাধিন সোহরাফ মৃধাকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আসামি হিসেবে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন মির্জাগঞ্জ থানার ওসি।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন