ই-পেপার

বরিশালে অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করতে উদাসিন স্বাস্থ্য বিভাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: May 29, 2022

সারাদেশে নিবন্ধনহীন অবৈধ ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৭২ ঘন্টার মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত বৃহস্পতিবার দেয়া এই নির্দেশনার সময় শেষ হচ্ছে আজ রোববার। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া এই নির্দেশ কার্যকরে উদ্যোগ নেই বরিশাল নগরীতে। দুইদিন অতিবাহিত হলেও মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্য বিভাগের কোন কার্যক্রম চোখে পড়েনি। এমন কি বরিশাল জুড়ে অবৈধ ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তালিকও নেই স্বাস্থ্য বিভাগে।

যদিও নির্দেশনার দ্বিতীয়দিন শনিবার সকালে বরিশালের বানারীপাড়া এবং গৌরনদীতে অভিযান করেছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এসময় চারটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ এবং একটি ক্লিনিকসহ তিনটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারাদেশের ন্যায় বরিশাল নগরীসহ গোটা বিভাগ জুড়েই ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে বেসরকারি ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার। প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকারি হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, চিকিৎসক এবং কর্মচারীরাও জড়িত রয়েছেন। তাছাড়া গড়ে ওঠা ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারই দালাল নির্ভর হয়ে পড়েছে। যেখানে প্রতিনিয়ত গলাকাটা হচ্ছে অসহায় রোগী এবং তাদের স্বজনদের। আবার অধিকাংশ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নেই সরকারি নিবন্ধন। এমন কি কোন কোন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিবন্ধন থাকলেও নেই বার্ষিক নবায়ন সনদও।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘নগরীতে সবথেকে বেশি ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে। এখানে কোয়াটার কিলোমিটার জায়গা জুড়ে রয়েছে ৩০টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ক্লিনিক। প্রতিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ক্লিনিকের সাথেই জড়িত রয়েছেন হাসপাতালের কোন না কোন চিকিৎসক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারী।

এছাড়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো পরিচালনায় সহযোগিতা করছেন কিছু চিকিৎসক। যারা প্রতি রোগীর পরীক্ষা নিরীক্ষার ওপর পাচ্ছেন সর্বনিম্ন ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ কমিশন। এসব চিকিৎসকদের কাছ থেকে রোগী নিজেদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে আসতে রয়েছেন মার্কেটিং কর্মী নামধারী দালাল।

ঠিক একই অবস্থা বরিশাল নগরীর জেনারেল (সদর) হাসপাতালের সামনে। এ হাসপাতালের সীমনা থেকে প্রায় ৫০ গজের মধ্যেই রয়েছে একাধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ক্লিনিক। এসব প্রতিষ্ঠানের নেপথ্যেও রয়েছেন ওই হাসপাতালের চিকিৎসক এবং কর্মচারী। তবে অভিযোগ রয়েছে, শুধু ডাক্তার এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীই নন, একের পর এক গড়ে ওঠা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের সাথে জড়িত রয়েছেন বিভিন্ন পত্রিকার মালিক, সাংবাদিক এবং পুলিশ কর্মকর্তারাও। তাদের নেতৃত্বেই এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত অসহায় রোগীদের জিম্মি করে গলাকাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

এদিকে, এতোসব ঘটে চললেও সুদৃষ্টি নেই নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ স্বাস্থ্য বিভাগের। নিবন্ধন দেয়া পর্যন্তই যেন তাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যাচ্ছে! কেননা, বরিশালজুড়ে গড়ে ওঠা অবৈধ ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যাও নেই স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে। শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ৭২ ঘন্টা (রোববার) এর মধ্যে অবৈধ ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের নির্দেশ দেয়া হলেও নড়াচড়া নেই বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের।

এসব বিষয় নিয়ে আলাপকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক ডা. হুমায়ুন শাহীন খান বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশ আমরা পেয়েছি। এরি মধ্যে আমরা জেলা এবং উপজেলায় অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযানও শুরু করেছি। তবে শনিবার দুপুর পর্যন্ত কোন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি এই কর্মকর্তা।

ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিষয়ে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক বলেন, বরিশালে মোট ১৮৮টি ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এরমধ্যে ১৪০টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ৪৮টি ক্লিনিক।

তিনি বলেন, ‘বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকায় নিবন্ধনবিহিন কোন ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার নেই। যা রয়েছে জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে। এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সিভিল সার্জন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। তবে বরিশালে অবৈধ ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে কতটা সেই তালিকা স্বাস্থ্য বিভাগে নেই বলে জানান এই কর্মকর্তা।

অপরদিকে, ‘বরিশাল জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল সিটির বাইরে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন সিভিল সার্জন। তবে তাদের কাছেও নেই অবৈধ ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিসংখ্যান। তবে এ বিষয় নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও অফিস বন্ধ থাকায় গত দুদিনে সিভিল সার্জনের দেখা পাওয়া যায়নি।

অবশ্য সিভিল সার্জন কার্যালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনার বিষয়টি নিয়ে রোববার সিভিল সার্জন কার্যালয়ে মিটিং করবেন সিভিল সার্জন। সেখানে তালিকা তৈরির পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে আবেদন করা হবে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট। ম্যাজিস্ট্রেট পাওয়ার পরে অভিযানে নামবেন তারা।

যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশের দ্বিতীয়দিন শনিবার বরিশালের গৌরনদী এবং বানারীপাড়া উপজেলায় পৃথক অভিযানের খবর পাওয়া গেছে। এসময় গৌরনদীতে নিবন্ধনবিহিন চারটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করে দেয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া বানারীপাড়ায় একটি ক্লিনিকসহ চারটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসন।

গৌরনদীতে বন্ধ করে দেয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো হল- উপজেলার আশা, ইয়াসিন, নিউ বনানী ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও সান এক্স-রে। এছাড়া বানারীপাড়ায় বন্ধের নির্দেশ দেয়া চারটি প্রতিষ্ঠান হল- বরিশাল সদর হাসপাতালে কর্মরত ডা. রিতা রাণী শীলের পরিচালিত ফাইভ ডক্টর’স ক্লিনিক কাম ডায়াগনস্টিক সেন্টার, আনোয়ার হোসেনের বনানী ডায়গনস্টিক সেন্টার ও সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিকের চাখার ডায়াগনস্টিক সেন্টার। উপজেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় থানা পুলিশের সহায়তায় উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ এই অভিযান পরিচালনা করে বলে জানা গেছে।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন