ই-পেপার

নলছিটিতে যৌতুকের জন্য প্যানেল মেয়রের নির্যাতনে হাসপাতালে স্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: July 13, 2022

যৌতুক দাবি করা দশ লাখ টাকা না দেওয়ায় স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ঝালকাঠির নলছিটি পৌরসভার প্যানেল মেয়র পলাশ তালুকদার ও তাঁর ভাই সোহাগ তালুকদারের বিরুদ্ধে। দুই ভাইয়ের নির্যাতনের শিকার রেশমা বেগম (৩৫) বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিস) চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় তিনি স্বামী ও দেবরের বিরুদ্ধে নলছিটি থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগে জানা যায়, ১৩ বছর আগে পারিবারিকভাবে নারায়গঞ্জের কাইছুমপুর এলাকার মো. আলী আশাবের মেয়ে রেশমা বেগমের সাথে ঝালকাঠির নলছিটি পৌরসভার বর্তমানে এক নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র পলাশ তালুকদারের বিয়ে হয়। বর্তমানে তাদের ঘরে দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।

বিয়ের পর থেকেই পলাশ তালুকদারের বিভিন্ন সময় শ্বশুর বাড়ি থেকে টাকা আনতেন। এ পর্যন্ত শ্বশুরের কাছ থেকে ধার হিসেবে ১৮ লাখ টাকা নিয়েছেন পলাশ। কিন্তু এক টাকাও পরিশোধ করেনি। নতুন করে আবার স্ত্রীর কাছে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে আসছেন। বাবার কাছ থেকে টাকা এনে দিতে না পারলে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় পলাশ।

এ নিয়ে প্রায়ই স্ত্রীকে মারধর করতেন তিনি। এমনকি স্ত্রী রেশমাকে বেশ কয়েকবার ঘর থেকে বের করে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। তার পরেও তিনি সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে স্বামীর নির্যাতন সয্য করেও পলাশের সাথে সংসার করে যাচ্ছিলেন।

সম্প্রতি রেশমা স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পারেন তাঁর স্বামীর অন্য এক মহিলার সাথে পরকিয়ার সম্পর্ক রয়েছে। এজন্যই তাকে প্রায়ই নির্যাতন করতেন পলাশ। এসব ঘটনা নিয়ে ঈদের কিছু দিন আগে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথাকাটাটি হয়। এসময় পলাশ স্ত্রীকে ১০ লাখ টাকা নিয়ে বাড়ি আসতে বলে। অন্যথায় বাবার বাড়ি চলে যেতে বলেন। মারধর করে রেশমার সন্তানদের রেখে দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেন পলাশ। উপায়ান্তু না পেয়ে রেশমা নারাছুগঞ্জ বাবার বাড়িতে চলে যায়।

সন্তানদের মায়ায় ঈদের এক দিন আগে পলাশের বাড়িতে আসে রেমশা। রাতে তাকে পরিকল্পিতভাবে বেধর মারধর করে পলাশ ও তাঁর ভাই সোহাগ। নির্মম নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ বেশমাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে চিকিৎসকরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।

বর্তমানে রেশমা শেবাচিম হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। খবর পেয়ে নারাছুগঞ্জ থেকে রেশমার বাবা, মা ও ভাই বরিশাল আসেন। তারাই রেশমার চিকিৎসা করাচ্ছেন।

অসুস্থ রেশমা অভিযোগ করেন, পরোকিয়ার কথা জানার পরে তাঁর স্বামী পলাশ তালুকদার, ভাই সোহাগ তালুকদার প্রায়ই আমাকে নির্যাতন করতেন। বিভিন্ন সময় বাবার বাড়ি থেকে ১৮ লাখ টাকা যৌতুক এনে দিয়েছি। এতেও তাদের মন ভরেনি। এখন ১০ লাখ টাকা যৌতুক এনে দিতে বলেছে। টাকা না দিলে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় তাঁরা। আমাকে মেরে গুম করার চেষ্টা করেছিল। প্রতিবেশীরা আমার চিৎকার শুনে প্রাণে রক্ষা করেছে। আমার সন্তানদের ফিরে পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

রেশমার বাবা মো. আলী আশাব বলেন, আমার মেয়ে রেশমাকে মারধর করার কারণ হলো তাকে তালাক দিয়ে পলাশ দ্বিতীয় বিয়ে করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই রেশমার ওপর নির্যাতন করে সন্তানদের রেখে দেন। আমরা এ ঘটনার বিচার দাবি করছি।

এ ব্যাপারে নলছিটি পৌরসভার প্যানেল মেয়র পলাশ তালুকদার বলেন, পারিবারিকভাবে আমার স্ত্রীর সাথে বিরোধ চলছে। কয়েক বছর আগে আমার স্ত্রীর অত্যাচারে আমার বাবা স্ট্রোক করে মৃত্যু হয়। আমার মা তাদের বাড়িতে বেড়াতে গেলে তাকেও অপমান করে বের করে দেন আমার স্ত্রী রেশমা। এনিয়েই আমাদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। আমি কোন যৌতুকের জন্য আমার স্ত্রীকে নির্যাতন করিনি এবং তাকে মারধরও করিনি। আমার প্রতিপক্ষরা ষড়যন্ত্র করে আমার স্ত্রীর সাথে মিলে আমার ক্ষতিসাধন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিস) দায়িত্বরত পুলিশের এসআই আব্দুল জলিল বলেন, আমি পলাশ তালুকদারকে ফোন করেছিলাম বিষয়টি নিস্পত্তি করার জন্য, কিন্তু পলাশ আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন তাঁর স্ত্রীকে তালাক দেওয়া হয়েছে। এখন আর তিনি রেশমার সাথে সংসার করবেন না। এ ব্যাপারে নলছিটি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আতাউর রহমান বলেন, অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন