ই-পেপার

দক্ষিণাঞ্চলে ১৫ প্রজাতির দেশী মাছের আকাল

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: November 18, 2021

উপূলীয় এলাকার গ্রামাঞ্চলে এক সময় অগ্রহায়ন-পৌষ-মাঘে পুকুর, খাল, ডোবায় দেশীয় মাছ ধরার ধুম পড়তো। এখন গ্রামাঞ্চলেও দেশী মাছের দেখা তেমন নেই বললেই চলে। বিশেষ করে ১৫ প্রজাতির দেশীয় মাছ এখন বিলুপ্ত প্রায়।

এগুলো হল- টেংরা, পুঁটি, বাইম, খলিসা, খরকাটি, গজার, শবেদা, ডারকা, পোয়া, বালিয়া, চেলা, শাল চোপরা, শৌল, ভেদা, বুড়াল, ফলি, চেং গতাসহ আরও কিছু জাত। গ্রামীণ জীবনের কৃষি ও চাষাবাদ ব্যবস্থা পরিবর্তনের সাথে হারিয়ে যাচ্ছে এসব দেশীয় মাছ।

মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশীয় মাছ বিলুপ্তির অন্যতম কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, কারেন্ট জালের অবৈধ ব্যবহার, ফসলের জমিতে অপরিকল্পিত কীটনাশক ব্যবহার, জলাশয় দূষণ, নদীর নব্যতা হ্রাস, উজানে বাঁধ নির্মাণ নদী সংশ্লিষ্ট খাল ও বিলের গভীরতা কমে যাওয়া, ডোবা এবং জলাশয় ভরাট, মা মাছের আবাসস্থলের অভাব, মা মাছের ডিম ছাড়ার আগেই ধরে ফেলা, ডোবা-নালা পুকুর ছেঁকে মাছ ধরা, বিদেশি রাক্ষুসে মাছের চাষ, মাছের প্রজননে ব্যাঘাত ঘটানো এবং খালে, বিলে ও পুকুরে নদীতে বিষাক্ত বর্জ ফেলা।

বর্ষায় ধানি জমিতে কইয়া জাল, বড়শি ও চাই পেতে মাছ ধরার ঐতিহ্যও হারিয়ে গেছে। যারা একসময় পুকুর, খাল-বিলে মাছ ধরতো তাদের অনেকেই এখন বাজার ছাড়া মাছ দেখতে পান না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন সময়  খালে বিলে জলাশয়ে  মাছ মরে ভেসে উঠছে। নদী, পুকুর, খালেও মাছ মরছে। মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, অনেক সময় ক্ষেতের ধান গাছ পচে অ্যামোনিয়া গ্যাস তৈরি হয়েও মাছ মারা যায়।

এ বিষয়ে আমতলীর চাওড়া ইউপির খান মতিয়ার রহমান জানান, ১০ বছর আগেও গ্রাামের বাড়ির দুটি পুকুর থেকে সারা বছর মাছ পেতাম। ঝাঁকি জাল ও বড়শি দিয়ে শোল, টাকি, চেলা, পুঁটি পাওয়া যেতো। শীত মৌসুমে পুকুরের পানি কমে এলে লোকেরা নেমে পানি ঘোলা করতো।

তখন জাল, ডালা, খুচন নিয়ে মাছ ধরতে নামতো সবাই। শোল, গজার, চিংড়ি, বায়লা, চান্দা, তারাবাইম, পুঁটি সবই ধরা পড়তো। এখন পুকুরের গভীরতা কমার সাথে সাথে কমেছে পানি। এত এত মাছও নেই। মাঝে মাঝে কিছু চেলা, পুঁটি, বেলের চেহারা দেখা যায়।

হলদিয়া ইউপি’র মো. জাকির হোসেন মাষ্টার জানান, হলদিয়া অফিস বাজার ধানখালী এলাকার বড় মাছ বাজার। এই বাজারে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নানা প্রজাতির দেশীয় মাছে ভরা থাকতো। এখন মাছগুলো বাজারে ওঠে না। বাজারের এক কোনায় দেশী প্রজাতির মাছ দেখা যায়। চাষের মাছে সয়লাব। যেদিকে তাকাই, পাঙ্গাস আর তেলাপিয়ার দখল।’

তিনি আরও বলেন, ‘ধানের জমির সার ও কীটনাশক মিশে নদী ও খালের পানি নষ্ট হচ্ছে। সার ও কীটনাশকের বিষক্রিয়ায় দেশী মাছ মরছে।’

আমতলী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা হালিমা সরদার জানান, ‘বিভিন্ন কারণেই দেশী প্রজাতির মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। যে মাছগুলো হারিয়ে যাচ্ছে বলে শুনছি, সেগুলো নিয়ে গবেষণা চলছে। পাবদা, টেংরা, বোয়াল, আইড় মাছের চাষ হচ্ছে। এর উদ্দেশ্যই হচ্ছে দেশী জাতের মাছ ফিরিয়ে আনা।’

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন