ই-পেপার

দক্ষিণাঞ্চলে তিন মাসে ৫৮৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত, আসছে ৭৫ হাজার কীট

খান রুবেল | আপডেট: November 24, 2021

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি অঞ্চলে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু এখন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওইসব অঞ্চলে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী ক্রমশই বাড়ছে। ব্যতিক্রম চিত্র বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলে। এ অঞ্চলে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী থাকলেও তা তুলনামুলক কম বলে দাবি করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে বরিশাল বিভাগের মধ্যে ভোলা এবং বরগুনা জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, ‘চলতি বছরের জুলাই থেকে এ পর্যন্ত বরিশাল মহানগরীসহ বিভাগে মোট ৫৮৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন ডেঙ্গু জ্বরে। আর মৃত্যু হয়েছে একজনের। আবার আক্রান্তদের মধ্যে থেকে সুস্থতার হারও অনেক বেশি।

তবে বরিশাল অঞ্চলে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ কম হলেও প্রস্তুতির দিক থেকে পিছিয়ে নেই স্বাস্থ্য বিভাগ। ডেঙ্গু আক্রান্তদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত কীটের ব্যবস্থা রেখেছেন তারা। এমনকি আগামী দু-একদিনের মধ্যে আরও ৭৫ হাজার কীট এ অঞ্চলের জন্য সরবরাহ দিচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এমনটিই জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস।

তিনি জানিয়েছেন, ‘ডেঙ্গু জ্বর মশাবাহিত রোগ। এডিস মশার কামরে এ জ্বর হয়ে থাকে। জমে থাকা পানিতে এডিস মশার লার্ভা জন্মায়। সেই মশার কামরে ডেঙ্গু জ্বর এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।

তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের জানুয়ারিই মূলত ডেঙ্গু জ্বর শুরু হয়। তবে বরিশাল অঞ্চলে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে। ওইসময় পিরোজপুর জেলায় প্রথম একজন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়।

পরবর্তী মহামারী করোনার প্রকোপের মধ্যেই গত আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ডেঙ্গু আক্রান্ত আরও ৩ জন রোগী ভর্তি হয় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সবশেষ ২৩ নভেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলায় মোট ৫৮৬ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন বিভিন্ন হাসপাতালে।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী গত প্রায় তিন মাসে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মোট ১৮৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়। এর মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় ভর্তি হয়েছে একজন। যার মধ্যে থেকে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৮২ জন।

এছাড়া পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ পর্যন্ত চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন ১৭৯ জন ডেঙ্গু রোগী। যার মধ্যে ১৭২ জন সুস্থ হয়েছেন। আর মৃত্যুবরণ করেছেন একজন। গত ১১ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করা নুসরাত জাহান লুসি পটুয়াখালী সদর এলাকারের বাসিন্দা।

অপরদিকে, দুই হাসপাতালের বাইরে বরিশাল জেলায় এখন পর্যন্ত ২৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৮ জন। পটুয়াখালী জেলায় ৪২ জন আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ১৬ হাজান হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করে সুস্থ হয়েছেন।

ভোলা জেলায় সর্বোচ্চ আক্রান্ত হয়েছেন ৬০ জন। যারা সাবাই ভোলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। এখনজন বাদে সবাই সুস্থ হয়েছেন। পিরোজপুর জেলায় এখন পর্যন্ত ২৫ জন আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। যাদের মধ্যে ২২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সবাই সুস্থতা লাভ করেছেন।

বরগুনা জেলায় আক্রান্ত শনাক্ত ৫৮ জনের মধ্যে ৫৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে সুস্থতা লাভ করেছেন ৫৩ জন। এছাড়া ঝালকাঠি জেলায় সর্বনিম্ন ৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে দুজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তারা চিকিৎসায় সুস্থতা লাভ করেন।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস বলেন, ‘শতর্কতাই পারে ডেঙ্গু জ্বর থেকে রক্ষা করতে। যাতে এডিস মশা জন্মতে না পারে সে জন্য বাড়ির আঙিনা সবসময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বিশেষ করে ফুলের টব, ফ্রিজসহ যেসব স্থানে পানি জমতে পারে সেগুলো নিয়মিত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এতে যেমন এডিস মশার সংস বিস্তার হবে না, তেমনি ডেঙ্গু জ্বর থেকেও রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষ্যন দেখা দিলে ঘরে বসে না থেকে তাৎক্ষনিক সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এমনকি সরকারি হাসপাতালে সল্প খরচে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের এই কর্মকর্তা।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন