ই-পেপার

খুচরা বাজারে বাজেটের প্রভাব, পণ্যের সংকট

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: May 23, 2022

নতুন অর্থ বছর অর্থাৎ ২০২২-২৩ এর বাজেট ঘোষণা হবে আগামী জুনে। এবারের বাজেটের আকার কি হবে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাছাড়া কোন কোন পণ্যসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পাবেও চূড়ান্ত হয়নি।

অথচ তার আগেই বাজেটের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বরিশালের বাজারগুলোতে। মূল্যবৃদ্ধির শঙ্কায় খুচরা বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে পাইকাররা। এর ফলে সংকটের অজুহাতে ভোক্তা পর্যায়ে নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়িয়ে বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা।

এদিকে পাইকাররাও বলছেন, বাজেটের পূর্বে কোম্পানি সরবরাহ কমিয়ে দিচ্ছে। এ কারণে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ দিতে পারছেন না তারা। তবে কোম্পানির প্রতিবেদকদের অভিযোগ সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও বাজেটে মূল্যবৃদ্ধির আশায় কিছু কিছু পণ্যের কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করছে।

নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ‘বেশ কিছু নিত্যপণ্যের মূল্য অঘোষিতভাবে বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে ভোজ্যতেল, প্রসাধনী এবং তামাকজাত দ্রব্যের গায়ে লেখা মূল্যের থেকে অতিরিক্ত মূল্য রাখা হচ্ছে ভোক্তাদের কাছ থেকে।

এর কারণ উল্লেখ করে কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘বাজেটের পূর্বে কোম্পানিগুলো তাদের অনেক পণ্যসামগ্রী পাইকারী পর্যায়ে সরবরাহ কমিয়ে দেয়। এ কারণে খুচরা পর্যায়ে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করা যাচ্ছে না। তাই খুচরা বিক্রেতারা সংকট দেখিয়ে অতিরিক্ত মূল্যে পণ্যসামগ্রী বিক্রি করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘সম্প্রতি মূল্যবৃদ্ধির কারণে পাইকারী এবং খুচরা বাজার থেকে উধাও হয়ে যায় ভোজ্য তেল। পরবর্তীতে সরকারিভাবে মূল্যবৃদ্ধি হলেও ভোক্তা পর্যায়ে অতিরিক্ত মূল্য রাখেন ক্রেতারা। এ নিয়ে বরিশাল বিভাগজুড়ে অভিযান পরিচালান করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তারা অভিযানসহ বিপুল পরিমাণ তেল উদ্ধার পরবর্তী গায়ে লেখা পূর্ব মূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা করেন। এর পরেও চাহিদা অনুযায়ী বাজারে ভোজ্য তেল খুঁজে পাচ্ছে না ভোক্তারা।

নগরীর বাংলাবাজার এলাকার বাসিন্দা দিনমজুর আমির হোসেন বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে বাংলাবাজার এলাকায় ভোজ্য তেল খুঁজে পাচ্ছি না। যা পাচ্ছি তা পাঁচ লিটারের বোতল। কিন্তু নিম্ন আয়ের মানুষদের একসঙ্গে পাঁচ লিটার তেল খেনা সম্ভব হচ্ছে না। তাই অনেক ঘুরেফিরে বাজার রোড এলাকা থেকে দুই লিটারের একবোতল তেল কিনতে পেরেছি।

অপরদিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে খুদ্র ব্যবসায়ী আলী আশ্রাফ বলেন, ‘সামনে বাজেট তাই এখনই পাইকারী ঘর থেকে মালামাল পাচ্ছি না। পূর্বে যেখানে পাঁচ কার্টুন মালামাল পেতাম সেখানে এখন সর্বোচ্চ দুই কার্টুন পাচ্ছি। আবার বড় দোকান থেকে খুচরা মূল্যে কিনতে গেলে প্রতিটি পণ্যে ১০-২০ টাকা করে বাড়িয়ে দিতে হচ্ছে।

এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘বাজেট আসলেই ব্যবসায়ীরা এমন কারসাজি শুরু করে। বিশেষ করে সিগারেট কোম্পানিগুলো বেশি ঝামেলা করে। কেননা প্রতি বাজেটেই সিগারেটের মূল্য বৃদ্ধি পায়। তাই কোম্পানিগুলো মে মাস থেকেই সরবরাহ কমিয়ে দেয়। জুনে নতুন বাজেট ঘোষণার পরে নতুন মূল্যে পণ্য সরবরাহ শুরু হয়।

এদিকে, নগরীর বধ্যভূমি সড়কের মুদি ও মনোহরী ব্যবসায়ী শাহিন মোল্লা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বাজেটের প্রভাব তেমন একটা পড়েনি। তবে জুন মাসের শুরুতে প্রভাব পড়তে পারে। তবে সিগারেটের বাজারে কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করেছে কোম্পানিগুলো। তারা সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। এখন আমরা যা পাচ্ছি তার থেকে বেশি নিতে গেলে বাড়তি টাকা দিয়ে নিতে হচ্ছে। পূর্বে এক প্যাকেট বেনসনের মূল্য ছিল ২৭০ টাকা। এখন সংকট দেখিয়ে ২৮৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে। যে কারণে ভোক্তা পর্যায়েও বাড়তি টাকায় সিগারেট বিক্রি করতে হচ্ছে।

অপরদিকে, বাজার রোডের ব্যবসায়ী সুমন বলেন, ‘তেলের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু এর পরেও কোম্পানিগুলো চাহিদা অনুযায়ী তেল দিচ্ছে না। তারা বাজেটের অপেক্ষা করছে। তেল নিয়ে সংকট নতুন অর্থ বছরের বাজেটের পরে কমবে বলে ধারনা এই ব্যবসায়ীর।

এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘আসন্ন বাজেটকে ঘিরে বেশ কিছু প্রসাধনীর মূল্য বৃদ্ধি করেছে খুচরা ব্যবসায়ীরা। পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় সাবান এবং কিছু কসমেটিক্স আইটেম বেশি মূল্য বিক্রি করা হচ্ছে।

সচেতন মহল বলছে, বাজেট আসলেই অন্ততঃ এক মাস আগেই তার প্রভাব পড়ে বাজারে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দৃষ্টি এবং মনিটরিংয়ের অভাবে অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করে ঊর্ধ্বমূল্যে পণ্যসামগ্রী বিক্রি করছে। তাই এ বিষয়ে প্রশাসনের মনিটরিং জোড়ালো করার দাবি সচেতন মহলের।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন