নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: March 23, 2023
বরিশালের হিজলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটির গঠনে অবৈধভাবে ভুয়া ভোটার তালিকা তৈরির অভিযোগ উঠেছে। ঢাকায় বসবাসরত শিশুকে স্কুলে ভর্তি দেখিয়ে তার অভিভাবককে ভোটার করা হয়েছে। এর প্রতিবাদ করায় একজন অভিভাবককে প্রকাশ্যে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন স্কুল শিক্ষক।
ঘটনাটি ঘটেছে গত ২০ মার্চ বরিশালের হিজলা উপজেলার ডাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী অভিভাবকের দেয়া অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে উপজেলা শিক্ষা অফিস। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে তদন্ত কমিটিকে। পাশাপাশি তৈরি করা ভোটার তালিকা স্থগিত করা হয়েছে।
হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ তারেক হাওলাদার ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. খালেদ শফিউল্লাহ জাবেদ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে ওই দিনের ঘটনায় অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক নয়ন তারা অভিযোগকারী অভিভাবক বারেক মোল্লার বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
ডাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক মো. বারেক মোল্লা জেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং শিক্ষা অফিসারের বরাবর করা অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, ‘মুশফিকা হাসান নামের এক শিশুকে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তি দেখানো হয়েছে। সে অনুযায়ী শিক্ষার্থীর মা আদিবা সুলতানাকে আসন্ন ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে ৫০ নম্বর ভোটার করা হয়েছে। মুশফিকা নামের ওই শিশুর বাবা হিজলার পশ্চিম ডাইয়া গ্রামের বাসিন্দা হলেও তিনি স্ত্রী সন্তান নিয়ে ঢাকায় বসবাস করেন এবং মুশফিকা ঢাকার একটি স্কুলে অধ্যায়নরত।
অপর একটি অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, গত ২০ মার্চ স্কুলের ম্যানিজিং কমিটি গঠন সংক্রান্ত বিষয়ে অভিভাবকদের নিয়ে সভা করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। সভায় ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। সভায় উপস্থিত অভিভাবক বারেক মোল্লা চূড়ান্ত ভোটার তালিকা দেখতে চাইলে এবং তার ছবি তুলতে চাইলে ক্ষুব্ধ হন প্রধান শিক্ষক মো. মজিবর রহমান ও সহকারী শিক্ষক নয়ন তারা। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায় সহকারী শিক্ষিকা ওই অভিভাবককে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ধাক্কাতে ধাক্কাতে স্কুল থেকে বের করে দেন।
ভুক্তভোগী বারেক মোল্লা বলেন, ‘অভিভাবক হিসেবে ভোটার তালিকা দেখার অধিকার আমার রয়েছে। কিন্তু আমাকে সেই তালিকা দেখতে না দিয়ে উল্টো লাঞ্ছিত করেছে। এর কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক অবৈধভাবে সুবিধা নিতে জাল ভোটার তালিকা তৈরি করেছে। যেই শিশুটিকে স্কুলের শিক্ষার্থী বলে দাবি করা হচ্ছে সে কখনই এই স্কুলের শিক্ষার্থী ছিল না বা তাকে কোন শিক্ষার্থীরা চেনেনও না। এ বিষয় নিয়ে আমি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সহকারী শিক্ষিকা নয়ন তারা বলেন, ‘ওইদিন অনেক অভিভাবক উপস্থিত ছিলেন। প্রধান শিক্ষক স্যার বক্তব্য দেয়ার সময় বারেক মোল্লা নামের ওই অভিভাবক বাঁধা সৃষ্টি করে। আমি সঞ্চালক হিসেবে তার প্রতিবাদ করায় বারেক মোল্লা উল্টো আমাকেও লাঞ্ছিত করেন। যেটা সব অভিভাবকরা দেখেছেন। আমি এই ঘটনায় বিচার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
প্রধান শিক্ষক মো. মজিবর রহমান বলেন, ‘বারেক মোল্লাকে কোনভাবে অসম্মান করা হয়নি। বরং তিনিই আমার সাথে দুর্বব্যহার করেছে। তবে বারেক মোল্লা এবং সহকারী শিক্ষিকা নয়ন তারা সম্পর্কে মামা-ভাগ্নি। তাদের মধ্যে পূর্ব বিরোধ রয়েছে। সেই বিরোধ এখন স্কুল পর্যন্ত গড়িয়েছে। তাছাড়া জাল ভোটার তালিকা তৈরির অভিযোগ সত্য নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সেই শিক্ষার্থীকে নিয়ে অভিযোগ তোলা হয়েছে সে আমাদের স্কুলের নিয়মিত শিক্ষার্থী। তাদের বাড়ি স্কুলের পাশেই। পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে এখন স্কুলের মধ্যেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে।
হিজলা উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. খালেদ শফিউল্লাহ জাবেদ বলেন, ‘গত ২১ মার্চ বারেক মোল্লার লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এই ঘটনায় দুজন এটিও’র সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি যেই ভোটার তালিকা নিয়ে অভিযোগ উঠেছে সেই তালিকাটি আপাতত স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তদন্ত কর্মকর্তা সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মীর মাসুম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার স্কুলের প্রধান শিক্ষককে ডাকা হয়েছিল। তিনি ওই শিক্ষার্থীর ভর্তির রেজিস্ট্রার এবং হাজিরা খাতা দেখিয়েছেন। তার পরেও বিষয়টি সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ভর্তির ক্ষেত্রে কোন জাল জালিয়াতি হয়েছে কিনা সেটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ তারেক হাওলাদার বলেন, ‘দুই পক্ষেরই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ পেয়েছি। দুটি অভিযোগ তদন্ত করে দেখার জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে বলা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।