নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: February 4, 2023
স্ত্রীকে শারীরিক সর্ম্পক স্থাপনের প্রস্তাব দেয়ায় শাহীন মোল্লা নামের এক ব্যবসায়ীকে বাসায় ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে স্বামী ইউসুফ মোল্লা ও তার দুই সহযোগী। হত্যার পরে মৃতদেহ বস্তাভরে ঘরের মধ্যে বিশেষ ব্যবস্থায় লুকিয়ে রাখে তারা।
পরে ওই ব্যব্সায়ীর পরিবারের কাছে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করতে গিয়ে র্যাবের হাতে আটক হন অভিযুক্তরা। আর এর মাধ্যমে ব্যবসায়ী শাহীন মোল্লা নিখোঁজ হওয়ার নয়দিন পরে রহস্যের জট উন্মোচিত হয়।
ঘটনাটি ঘটেছে বরিশাল নগরীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাঠালতলা তালুকদার হাউজিংয়ের প্রথম গলির নাহার ভিলার ৪র্থ তলায়।
শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে র্যাব-৮ সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহমুদুল হাসান।
তিনি জানান, অভিযুক্তদের স্বীকারোক্তি অনুসারে স্ত্রীকে কু-প্রস্তাব দেওয়ায় ডেকে নিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে এবং পিটিয়ে হত্যা করার তথ্য পাওয়া গেছে। তবে এর পেছনে এখন পর্যন্ত অন্য কোন কারণ পাওয়া যায়নি। অন্য কোন কারণ থাকলে তা পরবর্তী তদন্তে বেরিয়ে আসবে বলেন তিনি।
জানা গেছে, গত ২৭ জানুয়ারি বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাঠালতলা এলাকা থেকে নিখোঁজ হয় মুদি ব্যবসায়ী এমদাদুল হক মোল্লার ছেলে শাহীন মোল্লা (৩৮)। এ ঘটনায় নিখোঁজ শাহীন মোল্লার আত্মীয় আব্দুল খালেক ৩০ জানুয়ারি কোতয়ালী মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন।
৩১ জানুয়ারি শাহীন মোল্লার বোন শিরিন আক্তার মুন্নি র্যাব-৮ এর কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। এতে তারা যাদের সন্দেহভাজন বলে উল্লেখ করে তাদের র্যাব জিজ্ঞাসাবাদ করলে সম্পৃক্ততা না পেয়ে ছেড়ে দেয়। পরে ছায়া তদন্তে নামে র্যাব-৮ এর সিনিয়র এডি রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে একটি টিম।
এদিকে, ২ ফেব্রুয়ারি শিরিন আক্তারের স্বামীর কাছে মোবাইলে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অভিযুক্তরা। মোবাইলের কলসূত্র ধরে র্যাব অভিযান চালিয়ে মোবাইলের মালিককে বাকেরগঞ্জ থেকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চালায়। তবে মোবাইলের মালিক সে হলেও সিমের মালিক ছিলেন অন্যজন। এরপরেই মূলতঃ খুলতে শুরু করে নিখোঁজের রহস্যের জট।
র্যাব-৮ এর অধিনায়ক লে. কর্ণেল মাহমুদুল হাসান জানান, তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করে শুক্রবার দিবাগত রাতে হত্যায় জড়িত ইউসুফ মোল্লা (২০), নাজমুল ইসলাম ওরফে অমি (১৯) এবং হামিম শিকদারকে (১৮) বরিশাল মেট্রোপলিটন এয়ারপোর্ট থানার কাশিপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত ইসুফ মোল্লা বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলার ৬ নম্বর ওয়ার্ডরে রুহুল আমিন মোল্লার ছেলে, নাজমুল ইসলাম অমি পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার গণ্ডামারি এলাকার রকিবুল ইসলামের ছেলে এবং হামিম শিকদার বরিশাল জেলার বানারীপাড়া উপজেলার ৯ নং ওয়ার্ডের মিজান শিকদারের ছেলে। এরা সকলেই ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে ভাড়া থাকতো।
অভিযুক্ত প্রধান হত্যাকারী ইউসুফ মোল্লা স্বীকার করেছে তার সদ্যবিবাহিতা স্ত্রী স্বর্ণা বিশ্বাসকে (১৮) ব্যবসায়ী শাহীন মোল্লা বিভিন্ন সময়ে শারীরিক সর্ম্পক স্থাপনের জন্য প্রস্তাব দিত। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৭ জানুয়ারি রাত সোয়া ৯টার দিকে ইউসুফ মোল্লার ভাড়া বাসা রূপাতলী কাঠালতলা তালুকদার হাউজিং প্রথম গলির নাহার ভিলার ৪র্থ তলায় ডেকে নিয়ে প্রথমে শ্বাসরোধ করে বেদম পিটুনি দিয়ে হত্যা করে।
শাহীন মোল্লা মারা গেলে তার লাশ বস্তাবন্দি করে বাথরুমের ফলস্ ছাদের ওপরে রেখে ফলস ছাদের দরজা আঠা দিয়ে বন্ধ করে দেয়। এরপরের দিন তারা বাসা ছেড়ে দেন।
র্যাব-৮ প্রধান বলেন, গ্রেফতারকৃতদের মামলার অনুকূলে কোতয়ালী মডেল থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।