নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: December 3, 2021
বরিশালের বানারীপাড়ায় সন্ধ্যা নদীতে বিসিআইসির ৬৪০০ বস্তা ইউরিয়া সারসহ এম.ভি আব্দুর রহমান-২ বাল্কহেড ডুবে যাওয়ার ৯ দিন পর উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার রাত পৌনে ৯টার দিকে স্থানীয় ডুবুরীরা ঘরোয়া পদ্ধতীতে ড্রামে পানি ঢুকিয়ে ডুবিয়ে দিয়ে বাল্কহেডের সঙ্গে বেধেঁ হাওয়া দিয়ে সেই পানি বের করে সেটি সন্ধ্যা নদীর তলদেশ থেকে উপরের দিকে ভাসিয়ে উদ্ধার করেন। পরে ওই বাল্কহেডটি পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়।
এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন কুমার সাহার নির্দেশে বাল্কহেডের মালিক পক্ষ সেটি অন্য দু’টি বাল্কহেডের সহায়তায় বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার দিকে বানারীপাড়া পৌর শহরের মুসলিম গোরস্থান সংলগ্ন চরে এনে রাখেন। এসময় সেখানে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি ওই বাল্কহেডটি তদন্ত করেন। তদন্ত শেষে বাল্কহেডটি সেখানের একটি গ্যারেজের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ স্থান মেরামত করা হবে বলে মালিক পক্ষ জানান।
অপরদিকে বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীতে বিসিআইসির ৬৪০০ বস্তা ইউরিয়া সারসহ এম.ভি আব্দুর রহমান-২ বাল্কহেড ডুবে যাওয়ার ঘটনায় বরিশাল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ২৪ নভেম্বর জেলা প্রশাসক মো.জসীম উদ্দীন হায়দার স্বাক্ষরিত ওই তদন্ত কমিটির আহবায়ক হিসেবে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রের্ট মো.রকিবুর রহমান খাঁন ও সদস্য হিসেবে বরিশাল বিআইডব্লিউটিএর নদী বন্দর কর্তৃপক্ষের যুগ্ম-পরিচালক মো.মোস্তাফিজুর রহমান, বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন কুমার সাহা এবং থানার অফিসার ইনচার্জ মো.হেলাল উদ্দিনকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরেজমিন তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সে অনুযায়ী তারা ৩০ নভেম্বর থেকে সন্ধ্যা নদীতে ডুবে যাওয়া এম.ভি আব্দুর রহমান-২ বাল্কহেডটির ঘটনাস্থল তদন্ত শুরু করেছেন। পরবর্তীতে এব্যাপারে তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন বলে ওই কমিটির সদস্য ও বরিশাল বিআইডব্লিউটিএর নদী বন্দর কর্তৃপক্ষের যুগ্ম-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান।
তিনি আরও জানান, সন্ধ্যা নদীতে ডুবে যাওয়া এম.ভি আব্দুর রহমান-২ বাল্কহেডটির সার্ভে রিপোর্ট আছে কিনা তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, তাদের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওই বাল্কহেডটি পুলিশ কাস্টুডিতে থাকবে। এছাড়াও তাদের তদন্তে ওই বাল্কহেডের বিরুদ্ধে কোন রকম অনিয়ম পেলে সে ব্যাপারে তারা প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলেও তিনি জানান।
এদিকে, ২৪ নভেম্বর বিকেলে সাড়ে ৩টায় বিসিআইসির উপ-মহাব্যাবস্থাপক (ডিজিএম) মো. সাইদুর রহমান ও বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন কুমার সাহা এবং থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হেলাল উদ্দিন সন্ধ্যা নদীতে ডুবে যাওয়া বাল্কহেডটির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এব্যাপারে তারা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পৃথক ভাবে একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন কুমার সাহা জানান।
প্রসংঙ্গত ২২ নভেম্বর সকাল অনুমান সাড়ে ১০টার দিকে বাল্কহেডটি বানারীপাড়ায় সন্ধ্যা নদীতে ডুবে যায়। এঘটনার রহস্য উদ্ধারে তদন্ত চলছে বলে বরিশাল বিআইডব্লিউটিএর নদী বন্দর কর্তৃপক্ষের যুগ্ম-পরিচালক মো.মোস্তাফিজুর রহমান জানান।
এব্যাপারে এম.ভি আব্দুর রহমান-২ বাল্কহেডের মূল মালিক ঢাকার ধর্মগঞ্জ’র আব্দুর রহমানের কাছ থেকে মাসিক দেড়লাখ টাকা ভাড়াচুক্তি নেওয়া নওয়াপাড়া নৌ-যান শ্রমিক ফেডারেশন শাখার সভাপতি মো. ইমরান মাষ্টার জানান, বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীতে ডুবে যাওয়া এম.ভি আব্দুর রহমান-২ বাল্কহেডটি বিআইডব্লিউটি আড়াই লাখ টাকা চুক্তিতে পাশর্^বর্তী নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠী) উপজেলার ডুবুরী দিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে। এক্ষেত্রে তারা শুক্রবার সকাল থেকে চেষ্টা করে এবং বুধবার রাত পৌনে ৯টার দিকে সেটি উদ্ধার করতে স্বক্ণম হন বলে তিনি জানান।
তিনি আরও জানান, তিনি ওই ঘটনার দিন রাতে এব্যাপারে বানারীপাড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়রী করেছেন। এছাড়া একই রাতে সারের মালিক পক্ষ দাবী করে নওয়াপাড়ার লেবার সরদার মো. আনোয়ার হোসেন থানায় পৃথক একটি সাধারণ ডায়রী করেন। তাদের ওই দু’জনের পৃথক ভাবে দায়েরকরা সাধারণ ডায়রী দু’টি থানা পুলিশ খতিয়ে দেখছেন বলে জানান থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হেলাল উদ্দিন।
এদিকে, যশোরের নওয়াপাড়া থেকে বিসিআইসির ইউরিয়া সার নিয়ে নৌপথে উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর আসার ব্যাপারে বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক ফেডারেশন নওয়াপাড়া শাখার সভাপতি মো. ইমরান মাষ্টার জানান, সম্প্রতি তিনি নওয়াপাড়ার লেবার সরদার মো.আনোয়ার হোসেন’র মাধ্যমে অভয়নগর ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির সঙ্গে বস্তা প্রতি ১৬ টাকা ভাড়া চুক্তিতে বিসিআইসির গুদার থেকে ৬৪০০ বস্তা ইউরিয়া সার নিয়ে এম.ভি আব্দুর রহমান-২ বাল্কহেডটি বরিশালের শিকারপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসেন।
চুক্তি অনুযায়ী ১১ নভেম্বর তার ওই বাল্কহেডটি বিসিআইসির গুদাম থেকে ওই সার নিয়ে ছেড়ে আসার কথা থাকলেও নৌ-যান শ্রমিক আন্দোলনের কারণে ছেড়ে আসতে পারেননী। ফলে ১৪ নভেম্বর সেখান থেকে তার সুকানী শফিকুল ইসলাম, ইঞ্জিন চালক আলাউদ্দিন ও লস্কর আল আমিন ওই বাল্কহেডটি ছেড়ে আসেন।
এদিন রাতে তারা বাল্কহেডটি মঙ্গলা এলাকায় নঙ্গর করেণ এবং পরদিন সকালে সেখান থেকে তারা বাল্কহেডটি শিকারপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসেন। ১৬ নভেম্বর তার ওই বাল্কহেডটির মেশিন বিকল হয়ে পরলে সুকানী শফিকুল ইসলাম বাগেরহার জেলার ফুলহাতা-ঘশিয়াখালী এলাকায় নঙ্গর করেন।
২০ নভেম্বর সেখান থেকে তারা বাল্কহেডটির মেশিন শেরে কাউখালী এসে নঙ্গর করেণ এবং ২১ নভেম্বর সকালে সেখান থেকে ওই বাল্কহেডটি শিকারপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসেন। ওই দিন তারা শিকারপুর না গিয়ে বানারীপাড়ার খোদাবকশা দাখিল মাদরাসা সংলগ্ন সন্ধ্যা নদীতে নঙ্গর করেণ। ২২ নভেম্বর সকাল অনুমান সাড়ে ১০টার দিকে বাল্কহেডটির মেশিন রুমে তলা ফেটে ডুবে যায় বলে সুকানী শফিকুল ইসলাম ও ইঞ্জিন চালক আলাইদ্দিনের কাছ থেকে তিনি মোবাইল ফোনে খবর পান বলে ইমরান মাষ্টার জানান।