ই-পেপার

সকল মানবিক কাজকে হার মানিয়েছে কলাপাড়ার মিন্টুর মানবিকতা

এ এম মিজানুর রহমান বুলেট , কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি | আপডেট: January 7, 2022

কলাপাড়ার ৩২ বছরের যুবক মিন্টু সবসময়ই মানবিক কাজে নিয়োজিত থাকে। প্রায়শই মিন্টুকে দেখা যায় কেটে দেয়া হচ্ছে কারো হাতের ময়লাযুক্ত নক, গোসল করিয়ে পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে কারো গন্ধযুক্ত শরীর, আবার কারো চুল কেটে পরিচ্ছন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার আপ্রান চেষ্টা। দেখে মনে হচ্ছে নিজের কোন আপনজনকে এভাবে সুস্থ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলছেন। কিন্তু না এভাবে নিজের আপনজনের মতো করে প্রায় দুই বছর ধরে মানসিক ভারসাম্যহীনদের সেবা করছেন এক যুবক।

কলাপাড়া পৌর শহরের নাচনাপাড়া মহল্লার আজিজুক হকের ছেলে মোজাম্মেল হক মিন্টু। রাস্তায় পরে থাকা মানসিক ভারসাম্যহীনদের নিয়েই তার চিন্তা। করোনার শুরু থেকেই প্রতিনিয়ত মানসিক ভারসাম্যহীনদের খুজে বের করে এক বেলা করে খাবার দিচ্ছেন তিনি। শীতবস্ত্র বিতরন করছেন তাদের মাঝে। সড়কের কোথাও তাদের সাথে দেখা হলে খোজ খবর নেয়া সহ সকল অতিথিয়েতা দিচ্ছন তিনি। নির্ঘুম রাত কাটিয়ে অসুস্থদের দিচ্ছেন চিকিৎসা সেবা। এছাড়া কোন মানসীক ভারসাম্যহীন মানুষ মারা গেলে দাফনসহ সকল কার্যই সম্মন্ন করছেন তিনি। তার এ কাজে সহযোগিতা করছেন এলাকার কিছু বিত্তমান মানুষ। তবে এ মানবিক কাজ করতে গিয়ে তিনি হারিয়েছেন হোটেল কর্মচারীর চাকুরি। বিক্রি করে দিয়েছেন নিজের ১০ শতাংশ জমি। সব কিছু হারিয়েও তাদের সেবা করতে পেরেই মনের তৃপ্তি মিন্টুর।

মানবিক যুবক মোজাম্মেল হক মিন্টু জানান, দুই বছর আগে এক মানসীক ভারসাম্যহীন নারীর শরীরে পোকা ধরে। তাকে হাসপাতালের সম্মুখ্যে একজন ফেলে রেখে চলে যায়। ওই মানসীক ভারসম্যহীন নারীর গাঁ থেকে গন্ধ বের হচ্ছিল। কেউই তাকে ধরেনি। পরে মিন্টু তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা প্রদান করেন। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে বরিশালে নিয়ে চিকিৎসার এক পর্যায়ে তিনি মারা যান। সেদিন থেকেই তার মনে জাগ্রত হয় তিনি রাস্তায় ঘোরাফেরা মানসীক ভারসাম্যহীনদের সেবা করবেন। সেই দিন থেকেই মানসীক ভারসাম্যহীনদের সেবা করে আসছেন। এ কাজ করতে গিয়ে তার চাকুরি হারালে কিংবা জমি বিক্রি করলেও তার মনে কোন দু:খ নেই। তিনি তাদের একবেলা খাওয়াতে পারছেন এবং সেবা করে মানুষের মতো গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন এতেই তার সুখ। তবে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে তার কাজটা আরো সহজ হতো বলে জানিয়েছেন মিন্টু।

মিন্টুর বাবা আজিজুল হক জানান, তার ছেলে এ কাজ করতে গিয়ে সব কিছু বিক্রি করে দিলেও তার মনে আফসোস নাই। কারন যাদের এসব কাজ করার কথা, তারা মানবিক কাজ করছে। তাদের তার ছেলে মানবিক কাজ করে দেখিয়ে দিতে পারছে। তিনি নিজে আদর্শবান ছেলে জন্ম দিতে পেরে নিজেই গর্ববোধ করেছেন। মিন্টুর স্ত্রী অঞ্জলী আক্তার জুই জানান, তার স্বামীর কাজে তিনি নিজেও সহযোতিা করছেন। প্রায়ই রান্না করে দিচ্ছেন। তার স্বামীর কাজে শরিক হতে পেরে তিনি অনেক খুশি। তার স্বামী যেন আমৃত্যু পর্যন্ত এ কাজ চালিয়ে যেতে পারেন, এজন্য তিনি সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।

কলাপাড়া পৌর শহরের অনামিকা বিজনেস সেন্টারের স্বত্তাধিকারী দেবাশীষ মুখার্জি টিঙ্কু জানান, মিন্টুর এ কাজ আসলে সকল মানবিকতাকে হার মানিয়েছে। তাকে প্রায়ই তিনি সহযোগিতা করেন। কলাপাড়া সরকারী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কর্মচারী মস্তফা মিয়া জানান, মানুষ মানুষের জন্যে। তবে বেশির ভাগ মানুষের মনেই মানুষের কৃষ্ট হৃদয়ে লাগেনা। মিন্টুর এ কাজকে হার মানিয়েছে সবকিছু। তার এ কাজকে স্বাগত জানিয়ে তিনি নিজেও মিন্টুকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

কলাপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম রাকিবুল আহসান জানান, মিন্টুকে প্রায়শই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। এছাড়া ভবিষ্যতে তাকে সকল ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

 

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন