নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: January 13, 2022
মহামারী করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের দেয়া বিধি নিষেধ শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) থেকে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী করোনা প্রতিরোধে বাস এবং লঞ্চসহ গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনে সর্বোচ্চ সতর্কতা এবং বাধ্যতামূলক মাস্ক পড়তে হবে।
তবে বিধি নিষেধ বাস্তবায়ণের প্রথম দিনে এর কোনটিই বাস্তবাছু হতে দেখা যায়নি। পূর্বের ন্যায় স্বাভাবিক নিয়মেই লঞ্চ এবং বাসে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। মাস্ক ছিলো না অধিকাংশের মুখেই। এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি লঞ্চ বা সড়ক পরিবহন মালিক পক্ষ থেকে।
যদিও বিধি নিশেষ শুরুর দিনে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। প্রাথমিক পর্যায়ে সচেতনতামুলক প্রচারনা এবং পরবর্তীতে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার।
জানা গেছে, ‘দেশে হঠাৎ করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্তের হার বাড়তে শুরু করেছে। সেই সাথে অমিক্রণ আক্রান্ত শনাক্তও হয়েছে দেশে। তাই পূর্ব শতকর্তার অংশ হিসেবে দেশজুড়ে ১১ দফা বিধি নিষেধ জারি করেছে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ। গত ১০ জানুয়ারি জারিকৃত ১১ দফা নির্দেশনা কার্যকর হবে ১৩ জানুয়ারি থেকে।
নির্দেশনাগুলো হলো- দোকান, শপিংমল ও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং হোটেল-রেঁস্তোরাসহ সকল জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধান করা, অফিস-আদালতসহ ঘরের বাইরে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করা এবং স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে ব্যত্যয় রোধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা, রেঁস্তোরায় বসে খাবার গ্রহণ এবং আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য অবশ্যই করোনা টিকা সনদ প্রদর্শন করতে হবে।
১২ বছরের ঊর্ধ্বের সকল ছাত্র-ছাত্রীকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত তারিখের পরে টিকা সনদ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি না দেয়া, স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরসমূহে স্ক্রিনিং-এর সংখ্যা বাড়ানো। পোটসমুহে ক্রু-দের জাহাজের বাইরে আসার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা, ট্রেন, বাস এবং লঞ্চে সক্ষমতার অর্ধেক সংখ্যক যাত্রী নেয়া যাবে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও বিষয়ে কার্যকারিতার তারিখসহ সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে। সর্বপ্রকার যানের চালক ও সহকারীদের আবশ্যিকভাবে করোনার টিকা সনদধারী হতে হবে। বিদেশ থেকে আহত যাত্রীসহ সবাইকে বাধ্যতামূলক কোভিড-১৯ টিকা সনদ প্রদর্শন এবং র্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট করতে হবে।
স্বাস্থ্য বিধি প্রতিপালন এবং মাস্ক পরিধানের বিষয়ে সকল মসজিদে জুমার নামাজের খুতবায় ইমামগণ সংশ্লিষ্টদের সচেতন করবেন। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ এ বিষয়েটি নিশ্চিত করবেন। সর্বসাধারণের করোনার টিকা এবং বুস্টার ডোজ গ্রহণ তরাম্বিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় প্রচার এবং উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
কোভিড আক্রান্তের হার ক্রমবর্ধমান হওয়ায় উম্মুক্ত স্থানে সর্বপ্রকার সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং সমাবেশসমূহ পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে এবং কোন এলাকার ক্ষেত্রে বিশেষ কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সে ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিতে পারবে বলে নির্দেশনায় উল্লেখ রয়েছে। মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের দেয়া ওই বিধি নিষেধ বাস্তবায়ণে গতকাল ১৩ জানুয়ারি সকাল থেকে কার্যক্রম শুরু করেছে বরিশাল জেলা প্রশাসন।
এদিকে, বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ‘দক্ষিণাঞ্চলে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্তের হার ক্রমশই বাড়ছে। মাত্র কদিন আগেও দৈনিক শানাক্ত শূণ্যের কোটায় থাকলেও এখন তা বেড়েছে। সবশেষ বিগত ২৪ ঘন্টায় বরিশাল বিভাগে ১৪ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের আরটি-পিসিআর ল্যাবে শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৭০ ভাগ।
গত দুদিন আগে এর শনাক্তের হার ছিলো প্রায় চার শতাংশ। সর্বপরি স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বরিশাল অঞ্চলেও করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এজন্য সরকার থেকে দেয়া বিধি নিষেধ পরিপালনে সকলের প্রতি পরামর্শ দিয়েছেন বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. হুমায়ুন শাহীন খান।
এদিকে, ‘গতকাল ১৩ জানুয়ারি থেকে করোনা প্রতিরোধে সরকারের দেয়া বিধি নিষেধ কার্যকর হতে শুরু হয়েছে। বরিশাল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক পথসভা এবং বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে। বিধি নিষেধের প্রথম দিনে করোনা প্রতিরোধ বা বিধি নিষেধ বাস্তবায়ণে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তেমন একটা উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।
বিশেষ করে লঞ্চ এবং বাসস্ট্যান্ডের চিত্র আগের মতই রয়ে গেছে। দেখা গেছে অধিকাংশ যাত্রীই মাস্ক ছাড়া বাস এবং লঞ্চে ভ্রমন করছে। বাস এবং লঞ্চের সকল আসনেই যাত্রী বসছে। অভ্যন্তঢু রুটের বাসের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত যাত্রীও বহন করা হচ্ছে। আবার লঞ্চ এবং বাসস্ট্যাফদের মুখেও মাস্ক নেই। যাদের সাথে মাস্ক রয়েছে তারা সঠিকভাবে সেটার ব্যবহার করছে না। ফলে শুরুতেই সরকারের বিধি নিষেধ বাস্তবাছু নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন মহল।
তবে বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সরকারিভাবে বিধি নিষেধ শুরু হয়েছে ১৩ জানুয়ারি থেকে। তবে আমাদের কর্তৃপক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোন নির্দেশনা আমাদের কাছে আসেনি। তার পরেও সরকারি নির্দেশনার আলোকে লঞ্চ যাত্রী এবং স্টাফদের স্বাস্থ্যবিধি’র বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। লঞ্চে মাস্ক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখার বিষয়ে লঞ্চ মালিকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র একটি মনিটরিং টিমও রয়েছে।
অপরদিকে, বৃহস্পতিবার বিধি নিষেধ বাস্তবাছু কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, ‘আমরা শুরুতেই সরকারের দেয়া কঠোর নির্দেশনা জনগণের ওপর প্রয়োগ করতে চাই না। আমরা চেষ্টা করবো মানুষ যাতে স্বেচ্ছায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক ব্যবহার করে। এজন্য আমরা প্রথম দিনে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রায় আট হাজার মাস্ক পথচারী এবং শ্রমিকদের মাঝে বিতরণ করেছি। তবে করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনের ক্ষেত্রে আমরা কোনভাবেই ছাড় দেব না। মানুষ স্বেচ্ছায় বিধি নিষেধ না মানলে আমরা আইন প্রয়োগের মাধ্যমে কঠোর হতে বাধ্য হবো।