নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: November 30, 2021
শব্দ দূষণে অতিষ্ট আমতলী পৌরবাসী। প্রতিদিন সকাল থেকে অধিক রাত পর্যন্ত মাইকে বিভিন্ন ধরনের প্রচার চালানো হয়। প্রতিকারের জন্য আইন থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
জানাগেছে, আমতলী পৌর শহরে প্রতিদিন সকাল থেকে অধিক রাত পর্যন্ত ডিজেল ও পেট্রোলচালিত ইঞ্জিন বাস, ট্রাক, লরি, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, টেম্পু, অটো রিক্সা, অটো গাড়ী, টমটম ও থ্রিহুইলারের হাইড্রোলিক হর্ন ও ডিজেল চালিত জেনারেটরের মাধ্যমে শব্দ দূষণ হচ্ছে। এতে পৌর শহরে শব্দ দূষণ ভয়াবহ আকার ধারন করেছে।
হাইড্রোলিক হর্ন ও মাইকের শব্দ মানুষের কানের জন্য যন্ত্রণাদায়ক। শব্দ দূষণের কারণে মানুষের মানসিক ও শারীরিক অসু¯‘তার সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত শব্দ উচ্চ রক্তচাপ, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, মাথা ধরা, বদহজম, পেপটিক আলসার এবং অনিদ্রার কারণ বলে জানান চিকিৎসকরা।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ উল্লেখ আছে, সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ শব্দসীমা ৫৫ ডেসিবেল এবং রাত ৯টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪৫ ডেসিবেল।
একইভাবে নীরব এলাকায় দিনে ৫০ ও রাতে ৪০ ডেসিবেল, আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫ ও রাতে ৪৫ ডেসিবেল, মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০ ও রাতে ৫০ ডেসিবেল, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০ ও রাতে ৬০ ডেসিবেল এবং শিল্প এলাকায় দিনে ৭৫ ও রাতে ৭০ ডেসিবেল সর্বোচ্চ শব্দসীমা নির্ধারণ করা হয়। এর ওপরে শব্দ সৃষ্টি করাকে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গন্য করা হয়েছে।
বিধিমালায় আরও উল্লেখ আছে, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকার নির্ধারিত কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই সকল জায়গায় মোটর গাড়ির হর্ন বাজানো বা মাইকিং করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
এ আইন অমান্য করলে প্রথমবার অপরাধের জন্য এক মাস কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য ছয় মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে। এ সকল নিয়ম নীতি ও আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতিদিন আমতলী পৌর শহরে বিভিন্ন গাড়ীর হাউড্রোলিক হর্ন অহরহ বেজে যাচ্ছে।
আমতলী সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক মো. আবু ল হোসেন বিশ্বাস বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এশব্দ দূষণ রোধে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। প্রশাসনের কাছে শব্দ দূষণ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া জরুরী বলে মনে করেন তিনি।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসক ডাঃ মুনয়েমসাদ বলেন, শব্দ দূষণের ফলে কানের টিস্যুগুলো আস্তে আস্তে বিকল হয়ে পড়ে। তখন সে স্বাভাবিক শব্দ শুনতে পায় না। শিশুদের মধ্যে মানসিক ভীতির সৃষ্টি হয়। মাত্রাতিরিক্ত শব্দের কারণে মানুষের কারোনারি হার্ট ডিজিজ, কণ্ঠনালির প্রদাহ, আলসার ও মস্তিকের রোগ হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতাল এলাকায় মাইকিং করা নিষিদ্ধ কিন্তু নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রতিদিন যানবাহনের হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো হচ্ছে এবং মাইকে বিভিন্ন ধরনের প্রচার প্রচারনা চালাচ্ছে।
আমতলী পৌর মেয়র মোঃ মতিয়ার রহমান শব্দ দূষণে পৌরবাসী অতিষ্ঠের কথা স্বীকার করে বলেন, শব্দ দূষণ রোধে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি কিন্তু রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, কঠোর আইন প্রয়োগ করে শব্দ দূষণ রোধ করা হবে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসারএকেএম আব্দুল্লাহ বিন রশিদ বলেন, শব্দ দূষণ মারাত্মক অন্যায়। যারা শব্দ দূষণের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।