নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: May 28, 2022
ধান, নদী, খাল- এই তিনে বরিশাল। প্রতি বছর বর্ষা শুরু হওয়ার আগে থেকেই এ অঞ্চলে কদর বেড়ে যায় নৌকার। শতবর্ষী ইতিহাস নিয়ে সন্ধ্যা নদীর শাখা খাল আটঘরে ভেসে আছে ‘আটঘর ডিঙি নৌকার হাট’। উপকূলীয় এলাকাগুলোতে যাতায়াতের বাহন হিসেবে নৌকা বেশ জনপ্রিয়। ঘর থেকে বের হতেই এর প্রয়োজন হয়। নৌকায় পণ্যের পসরা সাজিয়ে ভাসমান হাটে বিক্রি করতে যান এখানকার মানুষ। আবার সদাইপাতি কিনে ডিঙি নৌকা বেয়েই ঘরে ফেরেন তাঁরা।
দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি জেলার মানুষের নৌকার চাহিদা মেটাতে নেছারাবাদের আটঘরে কৃষিপণ্যের ভাসমান হাট ও শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী নৌকার হাটের গোড়াপত্তন ঘটে। আটঘর কুড়িয়ানা খালের বিশেষ পরিচিতি রয়েছে। এ খালের কয়েক কিলোমিটারজুড়ে কৃষিপণ্যের ভাসমান হাট বসলেও নৌকার হাট বসে শুধু আটঘরে। ১০০ বছরের পুরোনো এ হাটকেই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নৌকার হাট হিসেবে মনে করা হয়।
নেছারাবাদ উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার পূর্বদিকে আটঘর বাজার। বছরের বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের নৌকার সবচেয়ে বড় হাট বসে এ বাজারে। খালের পানিতে সমান তালে চলে বাহারি নৌকার বিকি-কিনি। নদী বিস্তৃত এলাকা ও কাঠের সহজলভ্যতা হওয়ায় এখানে নৌকার চাহিদা ব্যাপক।
আটঘরের নৌকার হাটে গেলে দেখা যায়, প্রায় আধা কিলোমিটারজুড়ে সড়ক ও খালের দক্ষিণ প্রান্তে শত শত নৌকা সাজিয়ে রাখা হয়। সকাল ৬টায় শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমজমাট থাকে নৌকার হাট। নৌকা যে ওই অঞ্চলের মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, তা বোঝা যায় প্রতি শুক্রবার আটঘর নৌকা বাজারে মানুষজনের ভিড় দেখে।
শুধু নৌকা কেনার জন্যই নয়, নৌকাবাজারে মানুষজনের এমনিতে আসাটাও যেন ঐতিহ্যের অংশ। একসময় সুন্দরী কাঠ সহজলভ্য ছিল। তখন এ কাঠ দিয়ে নৌকা তৈরি হতো। এখন সেটি দুষ্প্রাপ্য হওয়ায় কড়াই, চাম্বুল ও মেহগনি কাঠ দিয়ে নৌকা তৈরি করা হয়।
গ্রামগুলোতে গেলে দেখা যায়, বাড়ির আঙিনায় নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। প্রতি হাটে আড়াইশ থেকে তিন শতাধিক নৌকা বিক্রি হয় এখানে। স্থানীয় কৃষক, জেলে ও গৃহস্থরা ছাড়াও বরিশালের বানারীপাড়া, উজিরপুর, ঝালকাঠি সদর, রাজাপুর ও পিরোজপুরের কাউখালী, নাজিরপুর উপজেলা থেকে নৌকা কিনতে মানুষ এ হাটে আসে।