নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: November 25, 2021
নির্বাচনে ভোটারদের কাছে ভোট চাইতে গিয়ে অনেক প্রতিশ্রুতিই দিয়ে থাকেন প্রার্থীরা। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে মিথ্যাচারও করে থাকেন ভরা মজলিসে। এমনটি করতে গিয়ে শুধু নিজেই বিতর্কে জড়ান না, বরং সরকার বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেও বিব্রত করার নজির রয়েছে একাধিক।
ভোটের রাজনীতিতে আবারও সেই বিতর্ক টেনে আনলেন ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মৃধা মু. আক্তার উজ জামান মিলন। ভোট পেতে তার মিথ্যাচার বর্তমান সময়ে পুলিশ বাহিনীর স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
বর্তমান সময়ে যেখানে কোন লবিং-তদবির ছাড়াই যোগ্যতার ভিত্তিতে পুলিশ বাহিনীতে চাকরির সুযোগ পাচ্ছে মানুষ, সেখানে ডিআইজি’র মাধ্যমে তদবির করে নিজ ইউনিয়নের লোকেদের চাকরি দেয়ার দম্ভ করেছেন মৃধা. মু. আক্তার উজ জামান মিলন। বুধবার সন্ধ্যায় রহমতপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এক উঠান বৈঠকে তার এমন মিথ্যাচার করে ভোট প্রার্থনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
বিগত নির্বাচনে বাবুগঞ্জ থানার সাবেক ওসিকে প্রকাশ্যে লাঞ্চিত করা আসন্ন নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মৃধা মু. আক্তার উজ জামান মিলনের এমন বক্তব্য সমালোচনার ঝড় তুলেছে। এমনকি ক্ষুব্ধ প্রতিকৃয়া ব্যক্তি করেছেন পুলিশের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এবং সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যরাও। তবে ক্ষমতাসিন দলের নেতা এবং দলীয় প্রার্থী হওয়ায় ভয়ে তার এই মিথ্যাচারের প্রতিবাদ করতে পারছে না।
‘বাবুগঞ্জ দর্পণ’ নামের একটি ফেসবুক পেজে প্রকাশ হওয়া ওই ৪১ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিও তে দেখা যায়, নিজ নৌকা প্রতীকের পক্ষ্যে উঠান বৈঠকে বক্তব্য রাখছেন রহমতপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী মৃধা মু. আক্তার উজ জামান মিলন। তিনি একই ইউনিয়নে ৯ম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান সরোয়ার মাহমুদ এর কাছে পরাজিত হন।
ভাইরাল হওয়া ভিডিও’র ৭ মিনিট ৭ সেকেন্ডের মাথায় নৌকার প্রার্থী মিলন মৃধাকে বলতে শোনা যায়, ‘তিনি উপজেলার রাজকর এলাকার বাসিন্দা আওয়ামী লীগ নেতা আতাহার আলী মৃধার ছেলেকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করে বিনা টাকায় চাকরি দিয়েছেন। অথচ পুলিশ বলছে, কোন সুপারিশে পুলিশ বাহিনীতে চাকুরির সুযোগ নেই। শুধুমাত্র যোগ্যতার ভিত্তিতেই পুলিশে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন নিয়োগ প্রত্যাশীরা। সেখানে ভোট পেতে মিলন মৃধার এমন মিথ্যাচার পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও ক্ষুব্ধ করেছে।
অপরদিকে, ‘একই ভিডিওতে গত নির্বাচনে পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও করেন মিলন মৃধা। আর এজন্য বাবুগঞ্জ থানার ওসি’র চেম্বারে ঢুকে তাকে প্রকাশ্যে মারধর করেছেন বলেও অকপটেই স্বীকার করেছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মৃধা মুহা. আক্তার উজ জামান মিলন।
ভিডিও’র ১০ মিনিট ৫০ সেকেন্ড থেকে শুরু করে ১৫-১৬ মিনিট পর্যন্ত আক্তার উজ জামান মিলিন বলেন, ‘বাবুগঞ্জের সাবেক ওসি মাহাবুব গৌরনদীর জামাই ছিলো। সে গত নির্বাচনে সরোয়ার মাহমুদ এর পক্ষ্য নিয়ে বিভিন্ন সেন্টারে আমার ভোট কেটেছে। সেন্টারে সেন্টারে গুলি করেছে। কিন্তু থানার অন্য কর্মকর্তা আর কনস্টেবলরা আমার লগেই ছিল। ‘বিষয়টি জানতে পাইরা ওসি মাহাবুবরে লইয়া হের চেম্বারে ঢুইক্কা মুজিব কোট খুইল্লা দেলাম চাইর-পাঁচটা কেনু।’
তার এই বক্তৃতাকালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সরদার খালেদ হোসেন স্বপনও মঞ্জে বসা ছিলেন। কিন্তু তিনি এ বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেননি। বরং পাশ থেকে অপর এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে সাবেক ওসি’র বিরুদ্ধে সাক্ষী হিসেবে বক্তব্য রাখেন। একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে অনডিউটি অবস্থায় প্রকাশ্যে মারধরের এমন বক্তব্য সাধারণ মহলকেও ক্ষুব্ধ করেছে।
এ প্রসঙ্গে রহমতপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মৃধা মুহাম্মদ আক্তার উজ জামান মিলন বলেন, ‘বক্তব্যে আমি পুলিশে চাকরি দেয়ার বিষয়টি যেভাবে উপস্থাপন করতে চেয়েছিলাম, হতে পারে সেভাবে বুঝাতে পারিনি। আমি বলতে চেয়েছি আমি ছাত্রলীগের সভাপতি থাকাবস্থায় যারা আমার কাছ থেকে প্রত্যায়ন নিয়েছে তাদের কারোর কাছ থেকে আমি একটা টাকাও নেইনি।
ওসিকে মারধরের বক্তব্য কতটা সত্য প্রশ্ন করা হলে মিলন মৃধা বলেন, ‘গত নির্বাচনের সময় ওসি মাহাবুব আমার তিনটি কেন্দ্রে গুলি করেছে। সেই তিনটি কেন্দ্রে আমি বিজয়ী হতাম। ওসি টাকা খেয়ে আমাকে হারিয়ে দিয়ে গেছে। সাবেক ডিআইজি হুমায়ুন ফোন করে আমাকে গালি দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বলেছে। বিএমপি’র সাবেক ডিসি রায়হান আমাকে ফোন করে হুমকি দিয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনা সত্য নয়। তবে নির্বাচনে পক্ষপাতিত্ব নিয়ে আমার লোকজনের সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়েছিল। বক্তব্যে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে লাঞ্চিত করার মিথ্যাচার কেন? এমন প্রশ্নের উত্তোরে মিলন বলেন, ‘বক্তব্যে মানুষ অনেক কথাই বলে। বক্তব্য আর বাস্তবতা এক না। ভোট পাওয়ার জন্য এটুকু বলতে হয়েছে। নির্বাচনের শেষ সময়ে আপনি এসব নিয়ে নিউজ করে আমার ক্ষতি করবেন না।
এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বাবুগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহাবুব রহমান বলেন, ‘এ ধরনের কোন ভিডিও আমার দৃষ্টিতে আসেনি। তাছাড়া পুলিশ নিয়ে এমন কোন বক্তব্য কোন প্রার্থী দিয়েছে কিনা সেটাও আমার জানা নেই। বিভাগীয় কমিশনারের সাথে মিটিংয়ে ব্যস্ততার কারণে এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন বলে জানান ওসি।
এ বিষয়ে আলাপকালে বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এমন কোন ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। তবে একজন প্রার্থীর এ ধরনের মন্তব্য কোনভাবেই কাম্য নয়। এটা নির্বাচন আচরণবিধি পরিপন্থি। তবে অভিযোগ পেলে নির্বাচন বিধি মোনাতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।