ই-পেপার

মঠবাড়িয়ায় তিন মাসে কবর খুঁড়ে তিনটি লাশ উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: January 6, 2022

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় পরিকল্পিতি ভাবে হত্যার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর তিন মাসে আদালতের নির্দেশক্রমে কবর খুঁড়ে ৩ জনের তিনটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) দুইটি এবং মঠবাড়িয়া থানা পুলিশ একটি।

গত ২৭ অক্টোবর পিরোজপুরের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আব্দুল্লাহ খাইরুল ইসলাম চৌধুরীর উপস্থিতিতে পিবিআই উপজেলার ভাইজোড়া গ্রামের কৃষক আঃ বারেক গাজীর লাশ (৬০), ২৫ নভেম্বর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. নাহিদ হাসান এর উপস্থিতিতে পৌর শহরের সবুজ নগর এলাকার ইমরান গাজী (২৬) এর লাশ এবং সর্বশেষ ২৩ ডিসেম্বর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রুমানা আফরোজ এর উপস্থিতিতে মঠবাড়িয়া থানা পুলিশ উপজেলার চড়কখালী গ্রাম থেকে রহিমা খাতুন (৬০) এর লাশ উদ্ধার করেন।

এর মধ্যে আঃ বারেক গাজী ও রহিমা খাতুনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য এবং ইমরান গাজীর লাশ পুনঃ ময়নাতদন্তের জন্য উদ্ধার করা হয়। এসময় মঠবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ প্রীতম কুমার পাইক ও পিরোজপুর পিবিআই’র পরিদর্শক আহসান কবির ও মঠবাড়িয়া থানার সাব-ইন্সেপেক্টর মোঃ রায়হান আহমেদ সোহেল উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, গত ২৯ আগস্ট সকাল ১১ টার দিকে উপজেলার ভাইজোড়া গ্রামের মৃত শের আলীর পুত্র  কৃষক আব্দুল বারেক গাজী নিজ জমিতে ইরি ধানের বীজ রোপন করেন। ওই দিন বিকালে কে বা কারা প্রতিবেশী মৃত. ওয়াজেদ আলী হাওলাদারের পুত্র প্রভাবশালী ইউনুস হাওলাদারের দুই গোছা বীজ চুরি করে।

এতে ইউনুস হাওলাদার বারেক গাজীকে সন্দেহ করে। একপর্যায়ে কৃষক আঃ বাকের গাজীকে সন্ধ্যায় তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে বীজতলা থেকে ধানের বীজ চুরির অপবাদ দিয়ে মারধর করে। এতে ঘটনাস্থলেই বারেক গাজী মারা গেলে সে স্ট্রোক করেছে বলে প্রভাবশালী ইউনুস হাওলাদার প্রচার চালায়। একপর্যায়ে প্রভাবশালী ইউনুস হাওলাদার লাশের ময়নাতদন্ত ছাড়াই কৃষক বারেক গাজীর পরিবারকে চাপ প্রয়োগ করে দাফন সম্পন্ন করেন।

এ ঘটনায় কৃষক বারেক গাজীর আপন ভাই আঃ হালিম গাজী বাদী হয়ে গত ৬ সেপ্টেম্বর মঠবাড়িয়া বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যার অভিযোগ এনে ইউনুস হাওলাদারকে (৫৫) আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন।

অপর দিকে গত ১১ অক্টোবর (সোমবার) দুপুরে মঠবাড়িয়া থানা পুলিশ পৌর শহরের সবুজ নগর এলাকার আউয়াল শরীফ এর নির্মঠুাধীন ভবনের তৃতীয় তলায় একটি কক্ষে ফ্যান লাগানোর রডের সাথে ইলেক্টট্রিক মিস্ত্রি ইমরান গাজীর গলায় ফাঁস লাগানো মৃতদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনা নিহতের ভাই আব্দুল্লাহ গাজী বাদি হয়ে ১৮ অক্টেবর ৫ জনের বিরুদ্ধে মঠবাড়িয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালতের বিচারকি হাকিম মো. কামরুল আজাদ মামলাটি আমলে নিয়ে এ মামলাটিও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই) কে তদন্তের আদেশ দেন।

এছাড়া উপজেলার চড়কখালীতে রহিমা খাতুনকে আগুনে পুড়ে হত্যার অভিযোগে তার পুত্র রুহুল আমিন বাদী হয়ে ২৪ নভেম্বর মঠবাড়িয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ৩জনকে আসামী করে মামলাটি দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে মঠবাড়িয়া থানাকে এফআইআরের নির্দেশ দেন।

মামলায় একই বাড়ির আঃ খালেক খা (৬০), তার স্ত্রী রোকেয়া বেগম ও কন্যা নোছেফা বেগমের নাম উল্লেখ্যসহ আরো ৩-৪ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করেছেন। জানাগেছে, উপজেলার চড়কখালী গ্রামের আবুল হাসেম হাওলাদারের স্ত্রী রহিমা খাতুন ৬ নভেম্বর রাতে নিজের রান্না ঘরে আগুনে দগ্ধ হয়।

এ সময় তার ডাকচিৎকারে ছেলে ও স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুই দিন চিকিৎসার পর রহিমা খাতুনের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা যাওয়ার পরমর্শন দেন। কিন্তু রহিমা খাতুনের ছেলেরা অসহায় হওয়ায় তারা তাকে বাড়ি নিয়ে যান। এরপর বাড়িতে বসে রহিমা খাতুনের মৃত্যু হয়।

মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পিবিআই’র ইন্সপেক্টর আহসান কবির ও মঠবাড়িয়া থানার সাব-ইন্সেপেক্টর মোঃ রায়হান আহমেদ সোহেল বলেন, আদালতের নির্দেশে নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেট ও ডাক্তারের উপস্থিতিতে ময়না তদন্তের জন্য লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর রহস্য জানা যাবে।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন