ই-পেপার

ভাইয়ের পক্ষ নিয়ে নারী চেয়ারম্যানের নারী নির্যাতন

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: December 15, 2021

ঝালকাঠির রাজাপুরে নারী ইউপি চেয়ারম্যান বিউটি সিকদার ও তাঁর ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্যাতনের শিকার সাদিয়া আক্তার (১৭) নামে এক কিশোরী এ অভিযোগ করে।

ঘটনার বিচার ও পুলিশকে মামলা নেওয়ার দাবিতে মঙ্গলবার দুপুর থেকে রাজাপুর থানার সামনে অবস্থান নেয় ওই কিশোরী। ওই কিশোরী চেয়ারম্যান বিউটি সিকদারের ছোট ভাই আহাদ হোসেন মিরাজের (২৮) স্ত্রী বলে দাবি করে। এ বিষয়ে সে রাজাপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনও করে।

সাদিয়া আক্তার বাগেরহাটের মোল্লারহাট উপজেলার গাওলা গ্রামের মৃত সারফরাজ সিকাদারের মেয়ে ও অভিযুক্ত মিরাজ রাজাপুরের শুক্তাগড় ইউনিয়নের মৃত শহিদুল্লাহ্ ফরায়েজীর ছেলে ও চেয়ারম্যান বিউটি সিকদারের একমাত্র ছোট ভাই।

কিশোরী জানায়, শিশু বয়সে বাবা মারা যাওয়ার পরে মায়ের সঙ্গেও সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সাদিয়ার। তখন এতিম সাদিয়া খুলনায় তাঁর ফুপুর কাছে থেকে বড় হয়। সে স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে। ২০১৯ সালের মে মাসে রাজাপুরের শুক্তাগড় ইউপি চেয়ারম্যান বিউটি সিকদারের ছোট ভাই আহাদ হোসেন মিরাজের সঙ্গে কিশোরী সাদিয়ার বিয়ে হয়। বয়স না হওয়া সত্যেও তথ্য গোপন করে তখন নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে আদালতে গিয়ে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করে তাঁরা।

প্রধম ধাপে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনের সময় বিউটি সিকদার তাঁর বরিশালের বগুড়া রোডের বাসায় সাদিয়াকে রেখে নিজের সন্তানদের দেখাশুনার দায়িত্ব দেন। স্বামীর সঙ্গেও সুসম্পর্ক ছিল তাঁর। হঠাৎ করে সাদিয়া জানতে পারে, তাঁর স্বামীর সঙ্গে একাধিক মেয়ের অবৈ সম্পর্ক আছে। এর প্রতিবাদ করায় দাম্পত্য জীবনের দুই বছর যেতে না যেতেই শুরু হয় তাদের মধ্যে কলহ। এক পর্যায়ে স্বামী মিরাজসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন সাদিয়াকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে।

শুধু তাই নয়, জোর করে সাদিয়ার গর্ভের সন্তানও নষ্ট করা হয়। আর এই সব নির্যাতনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান বিউটি সিকদার। পরে সাদিয়াকে খুলনায় তাঁর ফুপুর বাসায় দিয়ে যায় মিরাজ। ওই বাসায় থেকেই এসএসসি পরীক্ষায় অংশ সাদিয়া। পরীক্ষা শেষে সে জানতে পারে তাঁর স্বামী আরেকটি বিয়ে করেছে।

তাকে গত ১৭ নভেম্বর তালাক নোটিশ পাঠায় মিরাজ। তালাকের নোটিশ পেয়ে মঙ্গলবার দুপুরে রাজাপুর আসে সাদিয়া, তাঁর চাচা এনায়েত সিকদার ও ফুপু সুরাইয়া খানম। এ ঘটনা জানতে ইউপি চেয়ারম্যান বিউটি সিকদার ও তাঁর ভাই মিরাজ লোকজন পাঠিয়ে তাদের হুমকি দিচ্ছে। ভয়ে তাঁরা থানার ভেতরে আশ্রয় নিয়ে মামলা নিতে ওসিকে অনুরোধ করেন।

কিন্তু ঘটনাস্থল বরিশালে হওয়ায় ওসি মামলা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এসব ঘটনার বিচার দাবি করে মঙ্গলবার রাজাপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন সাদিয়া। পরে থানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিচার ও পুলিশকে মামলা নেওয়ার দাবি জানান তাঁরা। তাকে খুলনার আদালতে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছেন রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। কোনভাবেই মামলা করতে না পেরে রাতে বিকেলে খুলনার উদ্দেশ্যে চলে যায় সাদিয়া, তাঁর চাচা ও ফুপু।

সাদিয়ার অভিযোগ, অপ্রাপ্ত বয়সে মিরাজ আমাকে বিয়ে করে। তাঁর সঙ্গে দুই বছর সংসার করেছি। তাদের পরিবারের সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু স্বামীর অনৈতিক কিছু কাজের সমর্থন না করায় স্বামী ও তাঁর পরিবারের সবাই এখন আমাকে সহ্য করতে পারে না। তাঁরা আমাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করছে।

আমাকে একটি তালাকনামাও পাঠিয়েছে মিরাজ। মিরাজের অনৈতিক কর্মকান্ড, আমার ওপর নির্যাতন ও বিউটি সিকদারের অত্যাচারে আমি অতিষ্ট। নিজের জীবন বাঁচাতে এখন পুলিশের কাছে আশ্রয় নিয়েছি। তাঁরা আদালতে মামলা করতে বলেছেন। আমি চাই রাজাপুর থানায় এ মামলাটি হোক।

জানতে চাইলে সাদিয়ার স্বামী আহাদ হোসেন মিরাজ বলেন, ‘সাদিয়ার সঙ্গে অন্য একজনের সম্পর্ক রয়েছে। বিষটি জানার পরে আমি তাকে তালাক দিয়েছি। তাকে কোন নির্যাতন করা হয়নি।’

শুক্তগড় ইউপি চেয়ারম্যান বিউটি সিকদার বলেন, ‘আমি ভাইয়ে বউ হিসেবে সাদিয়াকে সব সময় ভালবেসেছি। ওদের দাম্পত্য কলহের মধ্যেও সাদিয়াকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছি। আমার ধারণা, আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সমাজে আমার সম্মানহানী করতে সাদিয়াকে দিয়ে এই অপপ্রচার করছে।’

রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পুলক চন্দ্র রায় বলেন, মেয়েটি থানায় এসে মামলা করতে চেয়েছে, কিন্তু ঘটনাস্থল বরিশালে। সে থাকে খুলনায়। তাই তাকে বরিশাল অথবা খুলনায় মামলা করার পরামর্শ দিয়েছে।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন