নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: January 26, 2023
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায় বসতঘর থেকে সাবেক ইউপি সদস্যর মা ও পুত্রবধূর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এসময় সাবেক ইউপি সদস্যের স্ত্রী মিনারা বেগম (৫০) কে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ভূতেরদিয়া গ্রাম থেকে তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহতরা হলেন- ওই গ্রামের বাসিন্দা এবং কেদারপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেনের বৃদ্ধা মা লালমোহননেসা (৯৫) ও পুত্রবধূ নাজমুন নাহার রিপা (২৩)।
পুলিশ বলছে, বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে ওই দুই নারীর। তাদেরকে চুরির নাটক সাজিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ফরহাদ সরদার।
এদিকে, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখনো কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। তবে এই ঘটনায় সন্দেহের তীর নিহত রিপার স্বামী সোলায়মান সোহাগ ও মা মিনারা বেগমকে। যে কারণে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত রিপার স্বামী সোলায়মান সোহাগকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
তথ্য নিশ্চিত করে বাবুগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মাহাবুবুর রহমান জানান, ‘বুধবার রাত ১২টার দিকে ওই ঘরে তিন নারী ঘুমিয়ে ছিলেন। ঘরের ভেতর থেকে তাদের কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে প্রতিবেশীরা থানায় খবর দেয়। পুলিশ গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল শেষে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
ওসি বলেন, ‘ঘটনাস্থলে ঘরের এক কোনে সিধ কাটার গর্ত দেখতে পাওয়া গেছে। তবে ঘরের ভেতরে তল্লাশি করে যতটুকু জানা গেছে তাতে ঘর থেকে কোন মালামাল চুরি হয়নি। যে কারণে ঘটনাটি রহস্যজনক এবং পরিকল্পিতও হতে পারে বলেন ওসি।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ‘বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে প্রতিবেশী খন্দকার কামাল হোসেনের মা মরিয়ম বেগম টয়লেটে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হন। তখন তিনি বাড়ির মধ্যে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির অবস্থান দেখতে পেয়ে ডাকাডাকি করেন। ওই ব্যক্তি কোন উত্তর না দিয়ে মরিয়ম বেগম ঘরের মধ্যে টর্স লাইট আনতে যায়। কিন্তু ফিরে এসে দেখতে পান ঘরে কেউ নেই।
তারা আরও জানান, ‘অজ্ঞাত ব্যক্তিকে না পেয়ে বাড়ির পাশে গোয়াল ঘরে গিয়ে দেখতে পান গরুসহ সবকিছু ঠিকভাবে আছে। পরে ঘরে ফেরার সময় সাবেক ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেনের ঘরের দরজা খোলা দেখতে পেয়ে ডাকাডাকি করেন। কিন্তু ঘরের ভেতর থেকে কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে তিনি ভয়ে ডাক-চিৎকার দিলে প্রতিবেশিরা জড়ো হন। এরপর ঘরের ভেতরে ভেতর থেকে থেকে সাবেক ইউপি সদস্যের মা এবং পুত্রবধূকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন এবং পুলিশকে খবর দেন।
সোলায়মান সোহাগের চাচাতো ভাই প্রতিবেশী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বুধবার ওই পরিবার একটি জমি বিক্রি করে। দুর্বৃত্তরা মনে করেছিলো জমি বিক্রির টাকা ঘরে আছে। তাই দুর্বৃত্তরা এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে। তাছাড়া ঘটনার সময় দুর্বৃত্তরা মৃতদেহের সাথে থাকা স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে বলে দাবি সোহাগের।
এদিকে, নিহত রিপার ফুফু সীমা বেগম বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। রিপার সাথে স্বামী সোলায়মান ও তার পরিবারের সাথে দ্বন্দ্ব চলে আসছিলো। এর আগে পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে রিপার সাথে সোলায়মানের ডিভোর্স হয়। পরে আবার স্থানীয়ভাবে মিমাংসার পরে তারা আবার বিয়ে করে সংসার শুরু করে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ইব্রাহীম বিশ্বাস বলেন, গেলো রাতে এ বাড়িতে দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী, মা এবং ছেলে বউ ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। ছেলে সোলায়মান রাতে বরিশালে ছিলেন। অনেকে ধারানা করছে, চুরির জন্য খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে দিয়েছে। যা খেয়ে দুজনের মৃত্যু এবং একজন অসুস্থ হয়েছে। তবে এটা পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসবে।
কেদারপুর ইউপি চেয়ারম্যান নূরে আলম বেপারী বলেন, ‘ঘরের এক পাশে একটি ছোট আকারের সিঁদকাটা হয়েছে। তবে সেটা দিয়ে কোন মানুষের চলাচল সম্ভব নয়। পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে যতটুকু জেনেছি তাতে কিছু স্বর্ণালংকারসহ অল্প কিছু মালামাল খোয়া গেছে। তবে এটি চুরির ঘটনা হলে ঘর থেকে আরও মালামাল খোয়া যেতে পারতো।
নিহত রিপার ভাই তরিকুল ইসলাম শাওন বলেন, ‘রাতে রিপার স্বামী আমাকে ফোন করে বাড়িতে চুরি ও ঘরের তিনজনকে কি যেন খাওয়ানো হয়েছে বলে জানায়। খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে যাই।
বাবুগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘ঘটনা শুনে রাত ১২টার মধ্যে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। পরে তিন নারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে মিনারা বেগমকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ওসি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি পুরোপুরি পরিকল্পিত একটি হত্যাকাণ্ড বলেই মনে হয়েছে। বিষয়টি ভিন্নখাতে রূপ দিতেই সিঁদ কেটে চুরির নাটক সাজানো হতে পারে। আমরা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। তাছাড়া নিহত রিপার স্বামী সোলায়মানকে আপাতত পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। তদন্তের সার্থে সোলায়মানের মা মরিয়ম বেগমকেও জিজ্ঞাবাদ করা হতে পারে।
বাকেরগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফরহাদ সরদার বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে বিষয়টি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে মনে হচ্ছে। মনয়া তদন্তের রিপোর্ট পেলে প্রকৃত ঘটনা যানা যাবে। তাছাড়া ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে, সকালে বাবুগঞ্জে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পুলিশ সুপার মো. ওয়াহিদুল ইসলাম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. শাহজাহান হোসেন। এসময় পুলিশ সুপার বলেন, ‘ঘটনাটি রহস্যজনক মনে হচ্ছে। তবে চুরির ঘটনাও হতে পারে। পুরো বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সাথে তদন্ত করে দেখছি। আশা করছি খুব শিঘ্রই বিষয়টি উদঘাটন হবে।