নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: May 30, 2022
স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা ছিল ৭২ ঘন্টার মধ্যে সকল অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করার। সে হিসেবে আল্টিমেটামের শেষ দিন ছিল রোববার পর্যন্ত। নির্দেশনা বাস্তবায়নে গত দুদিন ধরে বরিশালে অভিযান করছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
কিন্তু তিন দিনের অভিযানেও বরিশালের সকল অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করতে পারেনি বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগ। অর্ধেক ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে বন্ধের নোটিশ দিলেও বাকি অর্ধেক চলছে দিব্যি। যদিও পর্যায়ক্রমে বাকি অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোও বন্ধ করা হবে বলে জানিয়েছেন বরিশালের সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান।
তবে অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে স্বাস্থ্য বিভাগের এমন রহস্যজনক অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন মহল। আবার বন্ধ করে দেয়া কিছু ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে টাকার দরদামে যাদের সাথে সমঝোতা না হয়েছে তাদেরগুলোই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
বরিশালের সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান জানিয়েছেন, বরিশাল জেলায় মোট ৩৫টি অনিবন্ধিত ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এদের মধ্যে শনিবার ও রোববার ১৭টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করতে নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। নোটিশ পেয়ে ১৭টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকরা নিজেরাই তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছেন সেটা আমরা নিশ্চিত হয়েছি।
অবৈধ বাকি ১৮টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো না এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. মারিয়া হাসান বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা ছিল ৭২ ঘন্টার। তবে নির্দেশনায় এই সময়ের মধ্যে সবগুলো বন্ধ করতে হবে তেমন না। আমাদের বলা হয়েছে এই সময়ের মধ্যে যতগুলো সম্ভব বন্ধ করার। আমরা সেটাই করেছি।
সময়ের অভাবে বাকি ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে নোটিশ দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে এটি একটি অভিযানের মত। আমাদের এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। পর্যায়ক্রমে বাকি ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকেও বন্ধের নোটিশ প্রদান করা হবে। নিবন্ধন ছাড়া এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার চলতে পারবে না।
৭২ ঘন্টা অর্থাৎ তিন দিন কি খুব অল্প সময় এমন প্রশ্নের উত্তরে সিভিল সার্জন বলেন, ‘আসলে আমরা তিনদিন সময় পাইনি। আমাদের কাছে নির্দেশনা এসেছে সন্ধ্যার পরে। যে কারণে প্রথম দিন অভিযান করা সম্ভব হয়নি। দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ শনিবার থেকে অভিযান শুরু করি। দুদিনের মধ্যে সবাইকে নোটিশ পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়নি।
এদিকে, জেলা পযায়ে অভিযান হলেও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছি স্বাস্থ্য বিভাগ। এর কারণ হিসেবে জেলার সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান বলেন, ‘সিটি এলাকার ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ক্লিনিক নিয়ন্ত্রণ করে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অফিস। অভিযান করতে হলে তাদের অনুমতির প্রয়োজন।
তিনি বলেন, আমরা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অফিস থেকে অনুমতি নিয়ে সিটি এলাকাতেও অভিযান করবো। আর এই অভিযানে জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট থাকবে। জেলা প্রশাসকের নিকট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চাওয়া হবে। ম্যাজিস্ট্রেট পেলেই আমরা অভিযানে নেমে পড়বো। আর এটা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই হবে।
এ প্রসঙ্গে সম্মিলিত সামাজিক জোটের জেলা শাখার সদস্য সচিব এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, ৭২ ঘন্টার মধ্যে অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করার নির্দেশনা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দিয়েছেন। সেখানে বরিশালের সিভিল সার্জন অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার জেনেও অর্ধেক বন্ধ করে আর অর্ধেক চলানোর সুযোগ করে দেয়া একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর শিষ্টাচার বর্হিভূত আচরণ বলে মনে করছি। এটিই প্রমাণ করে স্বাস্থ্যখাতে চরম অব্যবস্থাপনা রয়েছে। একজন সিভিল সার্জন জানা সত্যেও কেন অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার তিনি বন্ধ করবেন না সেখানে অন্য প্রশ্ন আসতেই পারে।
সচেতন নাগরিক কমিটি বরিশাল জেলার সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা বলেন, অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের যে উদ্যোগ সরকার নিয়েছে তা যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। এই নির্দেশনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হবে বলে আমি প্রত্যাশা করি। তবে বরিশাল সিভিল সার্জন ৩৫টি অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে ১৭টি বন্ধ করে বাকি ১৮টি কেন বন্ধ করলেন না সেটি বোধগম্য নয়। আমি আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে তিনি অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো বন্ধ করতে উদ্যোগী হবেন।
এদিকে, বরিশালের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. হুমায়ুন শাহীন খান বলেন, ‘বিভাগের ছয় জেলা এবং বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মোট নিবন্ধিত ৫৭২টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ২১১টি ক্লিনিক রয়েছে। এর বাইরে রেজিস্ট্রেশনবিহিন ৫৯টি অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাকি যেগুলোর বিরুদ্ধে পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।