ই-পেপার

পৃথক হত্যা মামলায় দুজনের মৃত্যুদণ্ড, একজনের যাবজ্জীবন

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: January 18, 2022

বরিশালে পৃথক হত্যা মামলায় দুইজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। সোম ও মঙ্গলবার রায় দুটি ঘোষণা করেন বরিশাল জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক টিএম মুসা।

এর মধ্যে বরিশাল নগরীর অটোচালককে হত্যা মামলায় আসলাম তালুকদার নামে এক ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে তাকে। এছাড়াও হত্যাকাণ্ডে কোনো সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় আসলামের স্ত্রী খাদিজা আক্তারকে বেকসুর খালাস করা হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে আসামির উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষনা করেন জননিরাপত্তা বিঘ্নকারি অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল ও বিশেষ দায়রা জজ আদালতের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ টিএম মুসা। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ভোলা সদর থানার রইদের হাট এলাকার মৃত সিদ্দিক তালুকদারের ছেলে।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ২৯ জুন রাতে বরিশাল নগরীর দক্ষিণ সাগরদির ধান গবেষনা রোড থেকে আসামী আসলাম পূর্বপরিকল্পিতভাবে মেরী পরিবহন নামের একটি ব্যাটারিচালিত অটো চুরি করার উদ্দেশ্যে বাকেরগঞ্জে নিয়ে যায় ভাড়ায়। পরে সেখানে অটোর ড্রাইভার রোমানকে গলা ও পেট কেটে হত্যা করে। লাশ গুম করার জন্য আসামী রোমানের লাশ পার্শ্ববর্তী পান্ডব নদীতে ফেলে দেয়।

পরে অটো গাড়িটির রঙ পরিবর্তিত অবস্থায় আসামীর কাছ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় অটোরিক্সার মালিক বাদী হয়ে কোতয়ালী মডেল থানায় আসলাম ও তার স্ত্রী খাদিজার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ২০২১ সালের ৩১ মে আসলাম ও খাদিজার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন কোতয়ালী মডেল থানা এসআই শাহজালাল মল্লিক। আদালত ২৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসলামকে মৃত্যুদন্ড ও খাদিজাকে খালাস প্রদান করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী লস্কর নুরুল হক।

এর আগে সোমবার মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত আসামি সোয়েব বানারীপাড়া উপজেলার মাদারকাঠি গ্রামের আদম আলী হাওলাদারের ছেলে। তিনি বিজিবি সদস্য হিসেবে চুয়াডাঙ্গা সদর দফতরে কর্মরত ছিলেন। ঘটনার পরে সাময়িক বরখাস্ত হন।

আদালত সূত্র জানায়, সোয়েবের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ১৭ জুন বানারীপাড়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন মাদারকাঠি গ্রামের মৃত আব্দুল খানের ছেলে আবুল কালাম খান। অভিযোগে তিনি বলেন, তার আপন ভাই মোঃ জামাল খান (২৮) অটো রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করত।

সে ১৫ জুন রাতে বাজার করে বাড়িতে পৌঁছার ৫ মিনিট পরে তার ব্যবহৃত ফোনে কল আসলে সে ফোন রিসিভ করে বাড়ির লোকজনকে জানায় যে, পাশের বাড়ীর সোয়েব তাকে ডাকছে। রাতে সে আর ফিরে না আসায় তাকে সকাল বেলায় বিভিন্ন ভাবে খোঁজাখুজি করে না পাওয়া যায়নি।

১৭ জুন সকালে জানতে পারে যে জামালের লাশ খাল দিয়ে ভেসে যেতে দেখে স্থানীয়রা লাশ বাজারের ঘাটে আটকে রাখে। আত্মীয়-স্বজন আমার ভাইকে সনাক্ত করে। লাশের গলায়, বুকে, পেটে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়া হয়। বাদী খোঁজ নিয়ে জানতে পারে ঘটনার পরের দিন অর্থাৎ ১৬ জুন দুপুর বেলা সোয়েবের ঘরে থাকা সোয়েব, তার বাবা আদম আলী, ভাই সোহাগ হাওলাদার ও দুইটি নাবালিকা ভাগিনিদেরকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।

অপরদিকে, বাদী আরও জানতে পারে ঘটনার অনুমান ১৫-২০ দিন পূর্বে পাশের বাড়ির প্রবাসী বারেকের স্ত্রী তানিয়ার সাথে গভীর রাতে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকা অবস্থায় সোয়েব ও তানিয়াকে দেখে ফেলেছিল জামাল। এনিয়ে সোয়েবের সাথে জামালের ঝগড়া হয়। তখন সোয়েব জামালকে দেখে নিবে বলে হুমকি দেয়।

আবুল কালাম এসব বিষয় মিলিয়ে তার ভাই জামালকে পরকিয়া প্রেমের বিষয় জানাজানি হওয়ার কারনে সোয়েব পরিকল্পিত ভাবে ১৫ জুন হত্যা করেছে বলে মামলায় উল্লেখ করে। বাদী মামলায় সোয়েবের বাবা আদম আলী হাওলাদার, মা সেলিনা ও ভাই সোহাগ হাওলাদারকে অভিযুক্ত করেন। এধরণের মামলা দায়ের হলে থানা পুলিশ বিজিবি সদর দফতরে সোয়েবের বিষয় অবগত করে। আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে সোয়েবকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়।

সোয়েব আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে হত্যার কথা স্বিকার করে। তাকে সহযোগিতা করার ক্ষেত্রে আলী আজিম সহ আরও ৩ থেকে ৪ জনের নাম বলেন। থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পায়। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ শাহাবুদ্দিন চৌধুরী ২০১৬ সালের ১২ মার্চ সোয়েব আজিম সহ ৮ জনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ পত্র দাখিল করেন এবং ঘটনার সাথে জড়িত না থাকায় সোয়েবের বাবা মা ও ছোট ভাই সোহাগকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করেন। আদালত সুপারিশ গ্রহণ করে ৩ জনকে অব্যাহতি দিয়ে ৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন।

রাষ্ট্রপক্ষ মামলা ২৯ জনের সাক্ষ্য প্রদান করে সত্যতা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়। সাক্ষী প্রমাণে দোষী সাব্যস্ত হলে আদালত সোয়েবকে ফাসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা এবং সহযোগি আলী আজমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তি দেন। বাকি ৬ জনের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ না হওয়ায় তাদের বেকসুর খালাস দেন।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন