নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: January 17, 2022
বরিশালে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণের হার। গত চব্বিশ ঘন্টায় সংক্রমণের হার একদিনের ব্যবধানে বেড়ে দ্বিগুন হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবে এখন পর্যন্ত বিভাগে প্রতিদিনই করোনা শনাক্তের হার ও সংখ্যা বাড়ছে। ইতোমধ্যে চলতি মাসের প্রথম ১৭ দিনেই এ অঞ্চলে করোনা রোগী আগের দুমাসের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে।
সর্বশেষ সোমবার দুপুরের পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায় এ অঞ্চলে নতুন ৩৮ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। একদিনে আক্রান্তের এ সংখ্যা আগের দু মাসের যেকোন দিনের চেয়ে বেশী। বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগের দৈনিক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, সোমবার দুপুরের পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায় বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৮ জনে উন্নীত হয়েছে। যা আগের দিন ছিল ২০।
এ নিয়ে চলতি মাসের প্রথম ১৭ দিনেই এ অঞ্চলে ১৫৯ জনের দেহে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হল। যার সিংহভাগই বরিশাল মহানগরীতে। গত ২৪ ঘন্টায়ও মহানগরীতে ৯ জন সহ বরিশাল জেলাতেই ১৫ জনের দেহে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে।
এসময়ে পিরোজপুরে ৯জন, ঝালকাঠীতে ৭, ভোলাতে ৫ এবং পাটুয়াখালীতে আরো দুজনের দেহে করেনা পজিটিভ শনাক্ত হল। এ নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় মোট করোনা পজিটিভ শনাক্তের সংখ্যা দাড়াল ৪৫ হাজার ৫১২ জনে। এদিকে করোনা সংক্রমন প্রতিদিনই লাগামহীন বৃদ্ধি পেলেও বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে গন পরিবহনে নুন্যতম কোন স্বাস্থ্যবিধি অনুসরনের বালাই নেই। এমনকি বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জেলা প্রশাসন সহ স্থানীয় সরকার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করলেও পরিস্থিতির কোন পরির্বতন হচ্ছে না।
এমনকি নগর ভবনের তরফ থেকেও বরিশাল মহানগরীতে নুন্যতম কোন মাইকিং পর্যন্ত করা হচ্ছে না। জেলা প্রশাসনও এখনো ভ্রাম্যমান আদলত পরিচালনা সহ কোন ধরনের প্রচার প্রচরনা শুরু করেনি। কিন্তু করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এ সময়ে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে সীমাহীন এ উদাশীনতার মধ্যেই গন পরিবহনও চলছে তাদের মত করেই। অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচলের সরকারী বিধিনিষেধ নিজদের মত করে তুলে নিয়ে এখন বাস, লঞ্চ সহ সবধরনের যানবাহনেই যে যেভাবে পাড়ছে যাত্রী পরিবহন করছে। আর যাত্রীদের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে কোন সচেতনতা লক্ষনীয় নয়।
বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলা থেকে প্রতিদিন শতাধীক বহুতল নৌযান রাজধানীতে যাত্রী পরিবহন করছে। এছাড়াও বরিশাল, পটুযাখালী ও ভোলা নদী বন্দর থেকেও এ অঞ্চলের প্রায় ৫০ টি নৌযান যাত্রী পরিবহন করছে। শুধুমাত্র নৌপথেই দক্ষিণাঞ্চল থেকে দেশের বিভিন্ন রুটে নুন্যতম অর্ধ লক্ষাধীক যাত্রী ভ্রমন করে থাকে সড়ক পথেও এ অঞ্চলের প্রায় ২০টি রুট ছাড়াও রাজধানী ঢাকা এবং খুলানা ও রাজশাহী বিভাগের সাথে দুই শতাধীক সরকারীÑবেসরকারী বাসেও প্রতিদিন অন্তত ১০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে।
কিন্তু সব যানবাহনেই নুন্যতম স্বাস্থ্য বিধিও অনুপস্থিত। যাত্রীদের মাস্ক ব্যাবহার দুরের কথা, নৌযানগুলোতে নুন্যতম দুরত্ব বজায় রেখেও ভ্রমন করছেন না কোন যাত্রী। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্বম বরিশাল নদী বন্দরের সাথে রাজধানীর প্রতিদিন প্রায় ২৫টি নৌযান চলাচল করলেও সেখানেও নুন্যতম কোন স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। প্রতিটি নৌযানের লোয়ার ডেক থেকে আপার ডেকে যাত্রীদের অসম্ভব গাদাগাদি করেই চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে প্রতিদিন।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিভাগের ৬ জেলায় নতুন বছরের প্রথম ১৭ দিনেই আগের দুমাসের বেশী করেনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত ডিসেম্বরের পুরো মাসে যেখানে মাত্র ২২ জন করেনা রোগী শনাক্ত হয়েছিল, সেখানে চলতি মাসের প্রথম ১৭ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা ১৫৯। এমনকি নভেম্বর ও ডিসেম্বরের দু মাসে শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৮৮ জন। নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে বিভাগের ৬ জেলায় যেখানে ২৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়, সেখানে পরবর্তী ৭ দিনে সংখ্যাটা ৬৪ জন সহ গত ১৭ দিনে মোট আক্রান্ত ১৫৯ জন।
অথচ গোটা ডিসেম্বর মাসে দক্ষিণাঞ্চলে করোনা সংক্রমণ সংখ্যাটা ছিল ২২। আর গত নভেম্বরের ৩০ দিনে এ অঞ্চলে ৬৬ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল। নভেম্বর ও ডিসেম্বরে কোন মৃত্যু ছিল না। অক্টোবরে ৬ জেলায় মোট আক্রান্ত ২১৭ জনের মধ্যে প্রথম ১৫ দিনে দুজনের মৃত্যু হয়েছিল।
গত জুলাই মাসে করোনার মহা সংকটকাল অতিক্রমকালে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় ১৫ হাজার আক্রান্তের মধ্যে মৃত্যু হয় প্রায় দেড়শ নারী-পুরুষের। এরমধ্যে মহানগরীতেই আক্রান্তের সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে ৩ হাজার। মৃত্যু হয়েছিল ১২ জনের। গত মে মাসে দক্ষিণাঞ্চলে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৩৮০। মৃত্যু হয়েছিল ২৫ জনের।
তবে গত আগস্টের মধ্যভাগ থেকেই দক্ষিণাঞ্চলে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করলেও গোটা মাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে ৯ হাজার। মৃত্যু হয় ১৬৭ জনের। সেপ্টেম্বরে পরিস্থিতির নতুন মোড় নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ১৯৫ জনে হ্রাস পায়। তবে মৃত্যু হয়েছিল ২৩ জনের।
এ ব্যপারে বিআইডব্লিউটিএ’র বরিশালের বন্দর কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তিনি জানান, আমরা প্রায়ই বন্দরে মাইকিং করে যাত্রীদের করোনা সম্পর্কে সতর্ক করছি। তবে এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন আরো কঠোর ভুমিকা পালন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।