ই-পেপার

তত্ত্বেরচরে নৌকা সমর্থকের স্ত্রী-কন্যাকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা, ব্যাপক লুটপাট

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: January 12, 2022

নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে পরাজিণ আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের সমর্থকের বাড়ি-ঘর এবং গরু-ছাগলের খামার লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে বিদ্রোহী প্রার্থী ও তার লোকেদের বিরুদ্ধে। এসময় তারা নৌকা’র সমর্থকের স্ত্রী ও কিশোরী মেয়েকে ঘরে আটকে বাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে। এছাড়া লুট করেছেন কয়েক লাখ টাকার গরু, ছাগল, ভেড়া এবং স্বর্ণালংকার। এ ঘটনায় দগ্ধ নারী ও তার মেয়েকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বর্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।

গত ৭ জানুয়ারি ভোলা জেলার সীমান্তবর্তী বরিশালের হিজলা উপজেলার ধুলখোলা, কালীবগা তত্ত্বের চরে বরবর এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় হামলার শিকার নৌকা’র সমর্থক নাসির সরদারের স্ত্রী রাশিদা বেগম বাদী হয়ে হিজলা থানায় ৯৮ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ২৮ জনকে নামধারী এবং বাকি ৬০-৭০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

তবে ঘটনার পাঁচ দিন অতিবাহিত হলেও বরবর এই ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি থানা পুলিশ। অবশ্য ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন হিজলা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ইউনুস মিয়া।

মামলার নামধারী আসামিরা হলেন- ভোলার রাজাপুর ইউনিয়নে বিজয়ী চেয়াম্যানের চাচাতো ভাই স্বাধীন চৌধুরী এবং তাদের সমর্থক মন্তাজ মলাদার, ভুট্টু সরকার, মিজান সরদার, রুহুল আমিন, কাশেম আলী, হাকিম আলী, হারেছ সরদার, আলমগীর জোমাদ্দার, ঝাক্কু সরদার, মিলন চৌধুরী, বসার বেপারী, মিলন বেপারী, এরশাদ জোমাদ্দার, নুরু জোমাদ্দার, ছত্তার পটোয়ারি, হাকিম রাড়ী, শাহীন রাড়ী, বেল্লাল ফরাজী, খোকন চৌধুরী, তাজুল সরদার, কালাম সরদার, ছালেম জমাদ্দার, জুয়েল রাড়ী, ছানি জোমাদ্দার।

প্রত্যক্ষদর্শী এবং এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ‘গত ৫ জানুয়ারি ভোলা জেলার সীমান্তবর্তী রাজাপুর ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মিজানুর রহমানের পক্ষে কাজ করেন বরিশালের হিজলা উপজেলার কানিবগা তত্ত্বেরচরের বাসিন্দা নাসির সরদার। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরাজিণ এবং বিদ্রোহী প্রার্থী রেজাউল হক মিঠু চৌধুরী বিজয়ী হয়েছে।

নির্বাচন পরবর্তী গত ৭ জানুয়ারি বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিদ্রোহী প্রার্থী রেজাউল হক মিঠু চৌধুরীর চাচাতো ভাই স্বাধীন চৌধুরীর নেুৃত্বে একদল সন্ত্রাসী ঢাল, লেজা, সুরকী, বন্দুক, ছেনাসহ মরনাস্ত্র নিয়ে নৌ পথে এসে তত্ত্বেরচর নাসির সরদারের বাড়িতে অতর্কিত হামলা করে। তারা সাড়ে ১২টা থেকে তিনটা পর্যন্ত আড়াই ঘন্টা তান্ডব চালিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দেন নাসির সরদারের বাড়ি-ঘর এবং গবাদী পশুর খামার।

মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, হামলাকারীরা নাসির উদ্দিনের স্ত্রী রাশিদা বেগম এবং ১৭ বছর বয়সী কিশোরী কন্যা নাসরিনকে ঘরের মধ্যে আটকে রেখে চার দিক থেকে আগুন ধরিয়ে তাদের পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে। এতে মা-মায়ের শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝলসে যায়। ঘটনা জানতে পেরে রাশিদা বেগমের ছেলে রাসেল ফেসবুক লাইভে এসে মা এবং বোনকে বাঁচানোর আকুতি জানান।

এরপর ঘরের টিন ভেঙে পার্শ্ববর্তী ডোবায় ঝাপ দিয়ে প্রাণ রক্ষা করেন রাশিদা এবং নাসরিন। এরপর সেখান থেকে কিশোরী নাসরিনকে তুলে নিয়ে ১৭ ঘন্টা আটকে রাখার পর পার্শ্ববর্তী পাতা বনে ছেড়ে দেয়। এসময় রশিদা বেগম হামলাকারীদের নির্মমতা থেকে বাঁচতে পাতা বনে আত্মগোপন করেন।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ‘সন্ত্রাসীরা হামলা করেই খ্যান্ত হয়নি। তারা যাবার সময় নাসির বাড়ি থেকে ৫০ মন ধান, ২০ মন সয়াবিন, ৭ মন ডাল, স্বর্ণালংকার, ৮৬টি গুরু, ২০টি ছাগল এবং ২৭টি ভেড়া লুট করে। যার আনুমানিক মূল্য ৫৩ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। এছাড়া পুড়িয়ে দেয়া বসত ঘরে ১০ লাখ এবং বাগানের প্রায় দুই লাখ টাকার সুপারী ও বিভিন্ন ফলজ গাছ কেটে ফেলা হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, ‘সন্ত্রাসীরা লুটপাট করে চলে যাওয়ার সময় ৭টি ভেড়া এবং ৭টি গরু পাতা বনে ছেড়ে দিয়ে যায়। পরে খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই গরু এবং ভেড়া উদ্ধার করে। পাশাপাশি দগ্ধ মা ও মেয়েকে স্থানীয়দের সহযোগিতায় বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করান।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ‘নির্বাচনের পূর্বে থেকেই স্বাধীন চৌধুরীদের সাথে বিরোধ চলে আসছিল নাসির উদ্দিনের পরিবারের। ইতোপূর্বে তাদের গরু এবং বাছুর লুটপাটও করে তারা। যা নিয়ে হিজলা থানায় একাধিক মামলা চলামান রয়েছে। তাছাড়া কিছুদিন পূর্বে থেকে আসামিরা নাসির উদ্দিনের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে হিজলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইউনুস মিয়া বরবরচিত হামলা এবং লুটপাটের ঘটনা স্বীকার করে বলেন, ঘটনাস্থল মেঘনা নদীর পূর্ব পাশে। হিজলা থেকে স্পীডবোর্টে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে আড়াই ঘন্টা সময় লাগে। খবর পেয়ে আমাদের পুলিশের টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছাবার আগেই হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।

ওসি বলেন, ‘৭ জানুয়ারির ওই ঘটনায় বুধবার ১২ জানুয়ারি হিজলা থানায় মামলা হয়েছে। তবে ঘটনাস্থল হিজলা থানার অধিনে হলেও যারা হামলার শিকার এবং যারা এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটিরেছে তারা সবাই ভোলা জেলার বাসিন্দা। তার পরেও আমরা ঘটনার সাথে জড়িত আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন