নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: December 1, 2021
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের মধ্য বাকাল গ্রামে আলোচিত খ্রিষ্টান দেব প্রসাদ কর্মকার হত্যা মামলাটি ৭ মাসে চার বার তদন্ত কর্মকর্তা বদল করা হয়েছে। গত ৭ মাসে হত্যা রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকান্ডে জড়িতদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।
স্থানীয় ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বাকাল গ্রামের দেব প্রসাদ কর্মকারের সাথে একই গ্রামের কাদের ভাট্টির সঙ্গে মধ্য বাকাল মৌজার ৭৮ শতাংশ জমা জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল।
জমি ফিরে পেতে দেব প্রসাদ কর্মকার আদালতে মামলা দায়ের করলে ২০০৭ সালে আদালতের রায়ে সে জমি ফিরে পান। জমি ফিরে পাওয়ার পর থেকে প্রতিপক্ষ একই গ্রামের কাদের ভাট্টি, তার ছেলে ফিরোজ ভাট্টি, ফারুক ভাট্টি, সাইফুল ভাট্টি, ফরিদ ভাট্টি, মেয়ে জামাতাসহ কয়েকজন দেব প্রসাদ কর্মকারকে অপহরন করে হত্যার হুমকি দেন। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আগৈলঝাড়া থানায় ৫টি সাধারণ ডায়রী করেছিলেন নিহত দেব প্রসাদ কর্মকার।
চলতি বছরের ২২ এপ্রিল রাতে সে নিখোঁজ হন। ২৫ এপ্রিল তার নিজ গ্রামের একটি পরিত্যাক্ত ভিটা থেকে দেব প্রসাদ কর্মকার এর লাশ উদ্ধার করে আগৈলঝাড়া থানা পুলিশ।
মামলার বাদী ও নিহতের কন্যা এ্যালিজাবেথ কর্মকার অভিযোগ করে বলেন, প্রতিপক্ষ কাদের ভাট্টি ও তার ৪ পুত্র সহযোগীদের নিয়ে আমার বাবাকে অপহরন করে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।
পরে গত ২৮ এপ্রিল বরিশাল পুলিশ সুপারের সাথে সাক্ষাৎ করে বিষয়টি তাকে অবহিত করলে পুলিশ সুপার মামলা নিতে ওসি আগৈলঝাড়াকে নির্দেশ দেন। পুলিশ সুপারের নির্দেশে ওসি গোলাম ছরোয়ার ৮ মে মামলা নেন।
এ্যালিজাবেথ কর্মকার আরও বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রহমান লাশের সুরাতহাল রিপোর্টে লাশের চোখ দুটি উপরে ফেলা, পায়ের আঙ্গুলগুলোর নক তুলে ফেলা ছিল, পেটের নিচে ও মাথায় রক্তাক্ত বড় আকারের আঘাতের চিহ্নর কথা উল্লেখ করেননি। অথচ ময়না তদন্তের রিপোর্টে এসব এসেছে।
এব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি বিষপানের আলামত পেয়েছি এবং সেভাবেই সুরাতহাল রিপোর্ট করেছি।
নিহতের কন্যা এ্যালিজাবেথ কর্মকার বলেন, পরবর্তিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে বরিশাল পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ সুপার মামলাটি তদন্তের জন্য বরিশাল গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মাহাবুব হোসেনকে দায়িত্ব দেন। কিছুদিন পরে এসআই মাহাবুব বদলী হয়ে অন্যত্র চলে গেলে পুনরায় তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়।
পরে পুলিশ সুপার বরিশাল গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সোহেল মোল্লাকে মামলাটি তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেন। উপপরিদর্শক সোহেল মোল্লা আসামিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে হত্যা মামলার আসামিদের রক্ষায় বাবা আত্মহত্যা করেছে মর্মে হত্যার ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালায়। আমি উপপরিদর্শক সোহেলের বিরুদ্ধে বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজির কাছে অভিযোগ করলে ডিআইজি গত ১২ অক্টোবর মামলাটি তদন্তের জন্য বরিশাল পিবিআইকে দায়িত্ব প্রদান করেন।
বরিশাল পিবিআইর উপপরিদর্শক (এসআই) মো. নাঈম বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছেন। কিন্তু ৪ বার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন হলেও কেউই হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং আমাদেরকে পিতার মত পরিনতির ভয়ভীতি দেখিয়ে হুমকি দিচ্ছে।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে কাদের ভাট্টি ও ফিরোজ ভাট্টি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, দেব প্রসাদ কর্মকার আত্মহত্যা করেছে। জমি নিয়ে বিরোধের কারনে হয়রানী করতে মামলায় আমাদের জড়াতে চেষ্টা করছে। মামলার বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইর উপপরিদর্শক মো. নাঈম বলেন, মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলছে খুব শীঘ্রই রহস্য উদঘাটন হবে।
বরিশাল পিবিআইর পুলিশ সুপার মো. হুমায়ুন কবির জানান, মামলার তদন্ত চলছে। তদন্তের স্বার্থেই এখন কিছু বলা যাচ্ছে না। খুব শীঘ্রই হত্যার রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকান্ডে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।