নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: May 28, 2022
পরিবার পরিজন সবারই আশা ছিল লেখাপড়া শেষ করে সংসারের হাল ধরবে হৃদয় হোসেন মীর। কিন্তু ভাগ্যের চরম নির্মমতায় এখন ছেলেটিকে দিন-রাত পায়ে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখতে হচ্ছে। চিকিৎসায় লাখ-লাখ টাকা ব্যয় করে অভিভাবক নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। কীভাবে ছেলেকে সুস্থ করে তুলবেন ভেবে পাচ্ছে না দরিদ্র অভিভাবক। মায়ের চোখের পানিতে ভেসে যাচ্ছে ছেঁড়া শাড়ির আঁচল।
ঝালকাঠি সদর উপজেলার রাজাপুর গ্রামের রং মিস্ত্রি মোহাম্মদ তানজের আলী মীরের ছোট ছেলে হৃদয় হোসেন মীর। বাবা তানজের আলী জানান, ২০১৬ সালে গ্রামের স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করে ভর্তি হয় জেলা শহরের একটি বেসরকারি কলেজে। ২০১৮ সালে এইচএসসি পরীক্ষার সময় বাকবিতন্ডায় কলেজের কয়েক সহপাঠী তাকে মাথায় আঘাত করেন। খবর পেয়ে স্বজনরা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। কিন্তু মানসিকভাবে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন হৃদয়।
বাবা জানান, বরিশালে দীর্ঘ চিকিৎসায় সেরে উঠে ২০১৮ সালে এইচএসসি পরীক্ষায়ও পাস করে সে। কিন্তু মাঝেমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়তো। পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করতে গত ৪ মাস আগে ঢাকায় যায় চাকরির সন্ধানে। কিন্তু আবারও ভাগ্যের প্রতারণায় সেখানেও লোকজনের কাছে মার খেয়ে অসুস্থ হয়ে ফিরে আসতে হয় গ্রামের বাড়িতে। আর সেই থেকেই আবারও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে হৃদয়।
হৃদয়ের মা তাজনেহার বেগম জানান, বেঁধে না রাখলে সে সবাইকে মারধর করে। ভেঙে ফেলে নিজের এবং আশপাশের সবকিছু। বাধ্য হয়ে পায়ে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখতে হয়েছে বলে মা হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন। ছেলের এ অবস্থা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না অসহায় মা। তাই মায়ের কান্না আর থামতেই চায় না। ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে গোয়ালের গরু বিক্রি, এনজিও থেকে কিস্তির ঋণ এবং স্বজনদের কাছ থেকে সাহায্য সহযোগিতার নিয়ে এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।
বাবা ছেলের শোকে ঠিকমতো কাজ কর্ম করতে পারছেন না। তাই সংসারে দারিদ্র আরও জেঁকে বসেছে। এই অসহায় পরিবারটিকে সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে আর্থিক সাহায্য করা হলে সুচিৎসায় হৃদয় স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার এইচএম জহিরুল ইসলাম বলেন, ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে এই মুহূর্তে হৃদয়ের সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। তবে ঢাকায় জাতীয় মেন্টাল হেলথ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।