ই-পেপার

উপকূল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতিবান্ধব ছৈলা গাছ

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: November 14, 2021

বরগুনার আমতলীসহ উপকূলীয় এলাকায় ছৈলা একটি লবন সহিষ্ণু বন্য প্রজাতির বৃক্ষ ছৈলা গাছ দিন দিন কমে যাচ্ছে । ১০ বছর পূর্বেও আমতলী উপজেলার হলদিয়া, চাওড়া, গুলিশাখালী, আঠারগাছিয়া, কুকুয়া, আমতলী সদর, আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের নদী তীর সংলগ্ন চর এলাকায় ছৈলা গাছে বিস্তৃত ছিল। চরদখল ও চরে ঘরবাড়ী নির্মাণ এবং কৃষি উৎপাদনের কারণে প্রকৃতিগতভাবে জন্মানো ছৈলা গাছ দিনদিন কমে যাচ্ছে।

উপকূলীয় নদী তীরবর্তী চর, জোয়ার ভাটার প্রবাহমান খালের চর ও প্লাবনভূমি জুড়ে প্রকৃতিগতভাবে জন্মে। ছৈলা গাছের শেকড় মাটির অনেক গভীর অবধি যায় তাই সহসা ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে কিংবা উপড়ে পড়েনা। ফলে উপকূলীয় এলাকায় প্রকৃতিবান্ধব গাছ হিসেবে ছৈলা বনবিভাগের সংরক্ষিত বৃক্ষ।

কেবল কাঠের মূল্য বিবেচনায় নয়; মাটির সুদৃঢ় গঠনে পর্যায়ক্রমিক একটি দরকারি বৃক্ষ প্রজাতি হিসেবে ছৈলাকে বিবেচনা করা হয়। তাই দূর্যোগ প্রবণ উপকূলে প্রকৃতিবান্ধব ।

নয়নাভিরাম ছৈলা ফুলঃ
ছৈলাগাছের ফুল নছুাভিরাম ফুল। গাছে ছৈলা ফলও ধরে থরে থরে। তাই নদী তীরে ছৈলা বনে অপরূপ নিসর্গের মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়ে। ছৈলা ফুলের কলি বেশ শক্ত ও মোটা। আর ফোঁটা ফুলে পাঁপড়ির বদলে ধরে ব্রাশের মত অগণিত লোমশ কলি। সাদা আর গোলাপীর আবহে ফুটে থাকে কেশ গুচ্ছের মতো।

আর ফুলের মাঝখান দিয়ে বেশ বড় কেশর দন্ড ফুলের বাইরে দৃশ্যমান। মধূপায়ী পাখিরা আকৃষ্ট হয়ে ফুলের ওপর নাচে। তখন অপূর্ব লাগে ছৈলা বনের এ নিসর্গ। ছৈলা ফল দেখতে অনেকটা কেওড়ার মতোন। কেওড়া আকারে ছোট আর ছৈলা আকারে বড়। তবে দুটো বৃক্ষই একই গোত্রের।

ছেলার ফুল ও ফলঃ
ছৈলা ফল টক স্বাদের। যা নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ খায়। ছৈলা ফলে আবার জেলিও তৈরী হয়। ছৈলা ফুল সারারাত ভিজিয়ে অনেকে সুস্বাদু মধুও সংগ্রহ করে। আবার ছৈলা গাছের পাতা বন্যপ্রাণীর আহার। বোয়াল মাছের প্রিয় খাদ্য ছৈলা ফল। জোয়ারে জলাবদ্ধ ছৈলা গাছের নিচে বোয়াল মাছ আসে।

ছৈলা গাছ ম্যানগ্রোভ বনের বৈশিষ্ট্য মন্ডিত; তাই শ্বাসমূল হয়। ছৈলা গাছ উপকূলে ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস ঠেকায়। মাটির ক্ষয় রোধেও কার্যকর। প্রকৃতি বান্ধব ছৈলা বনে পাখিদের অভয়াশ্রম। রাতের ছৈলা বনে জোনাকি পোঁকারা দলবেঁধে আলো ছড়ায়।

তাই এমন প্রকৃতি বান্ধব ছৈলা বৃক্ষকে সংরক্ষণ এবং এর ব্যবহার বৃদ্ধিতে বিভিন্ন পর্যায়ে কার্যক্রম নেয় জরুরী। তবে এই গাছও একশ্রেণীর অসাধু লোকদের হাতে থেকে রক্ষা পায় না। তারা এই গাছ কেটে বাজারে বিক্রি করছে। তাই বন বিভাগসহ সকলকে উদ্যোগই হবে উপকূলীয় পরিবেশের জন্য সহায়ক এই গাছ টিকিয়ে রাখা এবং এর বিস্তার ঘটানোর জন্য।

এ প্রসঙ্গে আমতলী উপজেলা বনকর্মকর্তা কে.এম ফিরোজ কবির বলেন, ছৈলা গাছ পেিবশের জন্য একটি উপকারী গাছ। অসাধু লোকদের হাত থেকে ছৈলা গাছ রক্ষার জন্য সকলকে সচেতন হতে হবে। সরকারি জমিতে যে ছৈলা গাছ জন্মে তা সংরক্ষিত গাছ। সরকারি জমি থেকে এ গাছ কেহ কাটলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন