ই-পেপার

ইমামের কবজি কর্তনকারী বাবু ‘উগ্র গোষ্ঠীর’, বলছেন এলাকাবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: November 14, 2021

ইমামকে হত্যাচেষ্টা ও হাতের কবজি কেটে ফেলার ঘটনায় গ্রেফতার বাবলু মাঝি ওরফে বাবু মাঝি ‘উগ্র গোষ্ঠীর’ সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা। দীর্ঘ পরিকল্পনার মাধ্যমেই এই হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ তাদের। ঘটনার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত না হলে ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে বাবুর ‘সম্পৃক্ত গোষ্ঠী’। তবে গ্রেফতারকৃত বাবু ঠিক কোন উগ্র গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানাতে পারেননি এলাকাবাসী।

তবে পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করা হয় হামলাকারীকে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সকল অভিযোগ স্বীকার করেছেন। কোনো মতাদর্শ বা গোষ্ঠীর সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা আছে কি না, তা ক্ষতিয়ে দেখছেন তারা।

বরিশাল জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহজাহান হোসেন বলেন, পশ্চিম ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা বাবলু চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার একটি মাদরাসা থেকে আলিম পাস করেন কয়েক বছর আগে। বর্তমানে তিনি লেখাপড়া করেন না। করোনাকালে ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। এখন পোশাক কারখানায় নেই, আমাদের কাছে জানিয়েছেন তিনি এখন গাড়ির ড্রাইভার।

তিনি আরও বলেন, গ্রেফতার বাবলু মাঝি এলাকায় বলে বেড়াতেন ইসলামপুর বায়তুল আমান জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াকুব আলীর নামাজ পড়ানো সঠিকভাবে হয় না। এ জন্য গ্রামের বাসিন্দা ও ওই মসজিদের মুসল্লি হলেও ইমামে মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াকুব আলীর পেছনে নামাজ পড়তেন না। সে একা একা নামাজ আদায় করতো। নামাজ পড়ার নিয়মের দ্বিমত নিয়ে উভয়ের মধ্যে মনোমালিন্য ছিল।

সর্বশেষ চার-পাঁচ দিন আগে ইমাম মুহাম্মাদ ইয়াকুব আলীর কাছে মসজিদের চাবি চান বাবলু মাঝি। তিনি ইমামকে জানান, মসজিদে এতেকাফের মতো করে কয়েক দিন ইবাদত করবেন। কিন্তু ইমাম চাবি দিতে রাজি হননি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হামলা চালায় বলে এখন পর্যন্ত আমরা জেনেছি।

পুলিশ হামলাকারীর সংশ্লিষ্ট সব বিষয় গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে দেখছে। হামলাকারী মাদকাসক্ত বলে আমাদের কাছে মনে হয়নি। যা করেছেন, অপরিকল্পিতভাবে করেছে বলে মনে হয় না, জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

হামলার প্রতক্ষদর্শী ইমলামপুর গ্রামের বাসিন্দা সুমন বলেন, ঘটনাস্থল থেকে অনেকখানি দূরে ছিলাম আমি। আমাদের সামনে থেকেই দা নিয়ে হেঁটে যান বাবলু মাঝি। তখনো আমরা এমন ঘটনা আন্দাজ করতে পারিনি। কিছুক্ণে পরেই মসজিদের ইমামের চিৎকার শুনে ছুটে গিয়ে দেখি ইমামের হাত নিচে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে আছে। সুমন আরও বলেন, বাবলু বাড়িতে বেশি থাকতেন না। চট্টগ্রামে লেখাপড়া করেছেন। গ্রামবাসী ধারণা করছেন তিনি উগ্র কোনো গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। তিনি সমাজের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠেছেন।

এ ব্যাপারে ইমাম ইয়াকুব আলী বলেন, ঘটনার কিছুক্ষণ আগে মসজিদের সামনে আমার সঙ্গে বাবলুর দেখা হয়। তখন তার সঙ্গে কুশল বিনিময়ও করি। তখনো বাবলু শান্ত ছিল। তার হাতে কোনো অস্ত্র ছিল না। তবে ভাবলেশ দাঁড়িয়ে ছিল। কিছুক্ষণ পর আমি যখন আজানের প্রস্তুতি নিয়ে মসজিদের সামনে দাঁড়াই, তখন হঠাৎ এসে বড় দা দিয়ে আমাকে লক্ষ্য করে কোপ দিতে শুরু করে।

আহত ইমাম বলেন, যখন তার সঙ্গে কুশল বিনিময় করি, তখন সে আমাকে ফলো করার জন্যই অপেক্ষা করছিল। এরপরই হঠাৎ সে অস্ত্র নিয়ে হাজির হয়। আমার সঙ্গে তার কোনো বিরোধ ছিল না। তবে তার কথাবার্তা সব সময় উগ্র ছিল। ইসলাম নিয়েও তার মতামত শরিয়াহসম্মত ছিল না।

বাবুগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মাসুদুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় আহত ইমামের বড় ভাই সেলিম বেপারী বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আটক বাবলু মাঝিকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হামলার ঘটনা স্বীকার করায় রিমান্ড আবেদন করা হয়নি। আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন।

এদিকে, হামলাকারী বাবলু মাঝিকে ‘জঙ্গি’ আখ্যা দিয়ে তার দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে ইমাম পরিষদ। শনিবার (১৩ নভেম্বর) বিকেলে উপজেলার শিলনদিয়া বাজারে এই কর্মসূচি পালিত হয়।

জেলা ইমাম পরিষদের সভাপতি মাওলানা মো. নেছার উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন- বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই মঞ্জুর রহমান বাচ্চু, জাহাপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. রুহুল আমিন, শিলনদিয়া বাজার জামে মসজিদ পেশ ইমাম ও খতিব নজরুল ইসলাম প্রমুখ।

এ সময় বক্তারা দাবি করেন, হামলাকারী বাবলু মাঝি চট্টগ্রামে লেখাপড়া করার সময়ে জঙ্গি নেটওয়ার্কে জড়িতে পড়তে পারেন। এ জন্য তিনি মূল ইসলামের ধারা বাদ দিয়ে ভিন্ন পন্থায় চলে যান। হামলাকারী শুধু একজন ইমামের হাত কেটে নেননি, তিনি সব ইমাম, ধর্মপ্রাণ মুসলমানের অন্তরে আঘাত করেছেন। এই হত্যাচেষ্টাকারীর ফাঁসি দিতে হবে। মানববন্ধনে ইমাম পরিষদ, স্থানীয় আলেম-ওলামাসহ উপজেলার কয়েক শতাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার (১২ নভেম্বর) সন্ধ্যার সাড়ে ৭টার দিকে বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নের ইসলামপুর বায়তুল আমান জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াকুব আলীর ওপর হামলা চালিয়ে তার বাম হাতের কবজি ও ডান হাতের তিনটি আঙুল বিচ্ছিন্ন করে দেন বাবলু মাঝি। তিনি ওই গ্রামের সর্বহারা নেতা মৃত হারুন মাঝির ছেলে।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন