ইন্দুরকানী (পিরোজপুর) প্রতিবেদক | আপডেট: November 13, 2021
পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে দুটি ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে একটিতে আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী বিজয়ী হলেও অপরটিতে জেপি (মঞ্জু) মনোনীত প্রার্থী বিজয়ী হন।
উপজেলার ২ নং পত্তাশী ইউপিতে জেপি (মঞ্জু) মনোনীত প্রার্থী মো: শাহিন হাওলাদার বাই-সাইকেল প্রতীক নিয়ে ৩৫৫৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান হাওলাদার মোয়াজ্জেম হোসেন পান ২৪৯৯ ভোট। ১০৫৬ ভোটের ব্যাবধানে পরাজিত হন আ.লীগের প্রার্থী মোয়াজ্জেম।
জানা যায়,বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দুই ইউনিয়নে প্রশাসনের কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে সব গুলো কেন্দ্রেই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট গ্রহন সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি নির্বাচরে দায়িত্বে থাকা প্রশাসন ও উপজেলা রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সাধারন ভোটারদের। তবে দুপুর ১২টা থেকে ১টার মধ্যে পত্তাশী ইউপিতে সব গুলো কেন্দ্র থেকেই নৌকার প্রার্থীর এজেন্টরা কেন্দ্র ত্যাগ করেন।
এ কারনে দুপুরের পর নৌকার প্রার্থীর অনেক কর্মি সমার্থকদের ভোট কেন্দ্রে দেখা যায়নি। দুপুরের দিকে নৌকার প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন এমন খবর সব কেন্দ্র গুলোতে ছড়িয়ে পড়লে মোয়াজ্জেমের অনুসারী কর্মি সমার্থক এবং নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে ইচ্ছুক অনেক সাধারন ভোটার দুপুরের পর কেন্দ্রে আসেননি।
কি কারনে নৌকার প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন এবং তার এজেন্টরা হঠাৎ কেন্দ্র ত্যাগ করেছেন তা নিয়ে সাধারন ভেটারদের মধ্যে সৃস্টি হয় নানা রহস্যের। দলের দায়িত্বশীল নেতাকর্মিরাও তাৎক্ষনিক এর সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। ভোট বর্জনে তার কর্মি সমার্থকরাও চরম হতাশ হয়ে পড়েছেন। এ নিয়ে এখন বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল ও সাধারন ভোটারদের মধ্যেও নানা আলোচনার ঝড় বইছে।
তবে ভোট বর্জনের বিষয়ে নৌকার মনোনীত প্রার্থী হাওলাদার মোয়াজ্জেম হোসেন শুক্রবার রাতে গণমাধ্যকে জানান, দুপুরের আগে বহিরা গত লোকজন আমাকে ও আমার এজেন্টদের কেন্দ্র ছাড়ার জন্য হুমকি দেয়। নইলে আমার ও আমার লোকজনের অবস্থা খারাপ হবে।
এছাড়া বাই-সাইকেলের অনুসারী অনেক পর্যবেক্ষককে দিয়ে অধিকাংশ ভোট কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ আনেন তিনি। এ অবস্থায় আমি ও আমার কর্মি সমার্থকরা শক্ত ভাবে অবস্থান করতে গেলে ব্যাপক সহিংসতার আশংকা ছিল বিধায় আমি নির্বাচনী মাঠ ছেড়ে চলে আসি।
তবে এ ব্যাপারে তিনি ভোটের দিন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও প্রশাসনকে লিখিত কিংবা মৌখিক কোন অভিযোগ দেননি বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জেপির নেতৃবৃন্দ বলছেন, সুষ্ঠু ভোট হলে (নৌকার প্রার্থী) হারবেন এ বিষয়টি আচ করতে পেরেই তিনি দুপুরের দিকে ভোট বর্জন করেছেন। অবৈধ সুবিধা নিতে না পরায় তিনি এখন এ অভিযোগ দিচ্ছেন।
ভোট বর্জনের বিষয়ে আ.লীগের সিনিয়র নেতারাও এ বিষয়ে সুনির্দিস্ট কিছু জানেন না। তারা এ নির্বাচনের বিষয়টা নিয়ে অনেকটা হতবাক।
তবে সাধারন ভোটারদের অভিমত ভোট বর্জনের সিদ্ধান্তের বিষয়টা নৌকার প্রার্থীর জন্য ভুল ছিল। আর এ ভোট বর্জনের কারনে কপাল খুলেছে জেপির প্রার্থীর।
এ বিষয়ে উপজেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক শাহীন গাজী প্রতিবেদককে জানান, দুপুর ১২টার পরে হঠাৎ করে খবর পেলাম আমাদের প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন। এ খবরে একে একে কেন্দ্র গুলোতে নৌকার এজেন্টরা কেন্দ্র ছাড়ছে। দুপুরের পরে অনেক কর্মি সমার্থকদের ভোট দিতে যাওয়ার কথা থাকলেও তা যাননি। তবে তিনি জানান, ভোট বর্জন না করে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কেন্দ্রে অবস্থাণ করলে নৌকার বিজয় অনেকটাই সুনিশ্চিত ছিল।
এ ব্যাপারে উপজেলা আ.লীগের সাধারন সম্পাদক মনিরুজ্জামান সেলিম সাংবাদিকদের জানান, সকাল থেকেই বাই সাইকেল প্রতীকের লোকজন কয়েকটি কেন্দ্র নিয়ন্ত্রনে নেন। সেখানে তারা বহিরাগত লোক দিয়ে প্রভাব বিস্তার করেন এবং আমাদের লোকজনকে হুমকি দেন। যার কারনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবেনা বিধায় আমাদের নৌকার এজেন্টরা দুপুরের দিকে কেন্দ্র ছাড়েন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং উপজেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা এএসএমএ রোকনুজ্জামান খান বলেন,আমরা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ন ভোট গ্রহনের বিষয়ে তৎপর ছিলাম। দুটি ইউনিয়নে কোন রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ন ভাবে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পত্তাশীতে আ.লীগ প্রার্থীর ভোট বর্জনের বিষয়ে তিনি বলেন, কি কারনে তিনি ভোট বর্জন করেছেন তা আমরা জানিনা। কোন ধরনের অভিযোগ থাকলে তিনি মাঠ প্রশাসন এবং রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মৌখিক বা লিখিত ভাবে জানাতে পারতেন। কিন্তু ঐ প্রার্থীর পক্ষ থেকে এরধরনের কোন অভিযোগ আমরা পাইনি।