ই-পেপার

আমরা বেগম জিয়ার মৃত্যু কামনা করি না- বাহাউদ্দিন নাছিম

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: December 2, 2021

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ, আমরা তাঁর মৃত্যু কামনা করি না। আমরা চাই তিনি সুস্থ হয়ে উঠুক, স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক। তিনি দুর্নীতি করে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন।’

পার্বত্য শান্তি চুক্তির সাফল্যের ২৪ বছর উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় নগরীর ফজলুল হক এ্যাভিনিউ সড়কে নগর ভবন সংলগ্ন সিটি কর্পোরেশন চত্বরে বরিশাল জেলা ও নগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ.কে.এম জাহাঙ্গীর এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রতি আরও বলেন, ‘আমরা চাইনা যারা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে, যারা আইকে শ্রদ্ধা করতে জানেনা, যারা দেশকে ভালবাসতে পারেনা, জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে যারা খুশি হতে পারেনা সেই অপশক্তি কোনভাবে ষড়যন্ত্র করে বাংলাদেশ বিরোধী রাজনীতি করবে। এটা আমরা মেনে নেব না।’

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে কোন অপশক্তিকে, সাম্প্রদায়িক শক্তিকে, দূর্নীতিবাজ, বোমা বাজ হাওয়া ভবনের সেই কুখ্যাত সন্ত্রাসীরা যে কোন ভাবে দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অবৈধ ভাবে দখল করতে না পারে তার জন্য সকলকে সজাগ থাকার আহবান জানান তিনি।’

বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মনে করে জনগণই আমাদের এক মাত্র শক্তি। জনগনের আস্থায়, জনগণের সমর্থনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। কোন ষড়যন্ত্রকারীরা ষড়যন্ত্র করে আমাদের এই বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে প্রতিহত করতে পারবেনা।’

আওয়ামী লীগের এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘যারা বাংলাদেশের আইন-শৃংখলার অবনতি ঘটাতে চায়, যারা হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে দাঙ্গা, হাঙ্গামা করে রাজনৈতিক ফয়দা লুটতে চায়, এখন তারাই আবার খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছে।’

খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে অনেক বড় ডাক্তার আছে তাদেরকে নিয়ে আসুন, বাংলাদেশে খালেদা জিয়ার উন্নয়ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন, ওনারা সেই চেষ্টাটা করেন না। আপনারা কি শুনেছেন কোন একটা দেশের সাথে তারা যোগাযোগ করেছে ? তারা চিকিৎসক আনার কথাও বলেনা আর চেষ্টাও করেনা। তার কারণ খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে ওনারা নেতা হওয়ার চেষ্টা করছে। কে কারচেয়ে বড় নেতা হবেন সেই দেনদরবারে ওনারা ব্যস্থ।

ওনারা খালেদা জিয়ার মৃত্যুর পরে (যদি খালেদা জিয়ার কিছু হয়) কিভাবে তারা জানাজা পড়বেন, কিভাবে ঢাকা শহরে সারা দেশ থেকে সন্ত্রাসীদের এনে জানাজার নামে অবস্থান ধর্মঘট করে ঢাকা শহর অচল করে দেবে সেই ব্যবস্থা করছেন। ওনারা গরুর বায়না দিয়েছেন। গরুর বায়না দিয়ে কিভাবে খাওয়াবেন সেই ব্যবস্থাও ওনারা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।’

খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিএনপি অপরাজনীতি করছে বলে মন্তব্য করেন বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘আমরা অপরাজনীতি করিনা। শেখ হাসিনা মানবতার মা বলেই খালেদা জিয়া বাসায় থাকে, হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করান। মানবিক কারণে তাঁর সাজা স্থগিত করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তার পরও তারা বলে খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। তার পরেও মির্জা ফখরুল একে একে মিথ্যা কথা বলছে।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিষদাগার করছে। তারা অসন্মান ভাষায় কথা বলছে, ভদ্রতা শেখেনাই। কখনো বলে মানবিক কারণে থালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানো হোক, আবার কখনো বলে আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত করে পতন ঘটিয়েই আমরা খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করাবো।’

আন্দোলন করে বিএনপি খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারেনাই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ হয়েছে। নেতাকর্মীরা বিএনপি ছেড়ে ঘরে বসে গিয়েছে। তাদের জনসমর্থন নেই। আর জনগণেরও তাদের উপর আস্থা নেই। তারা পারে জালাও পোড়াও করতে, মানুষ হত্যা করতে, মানুষ পুড়িয়ে কয়লা করে লাশ বানিয়ে রাখতে। তারা পারে লাশের রাজনীতি করতে।

বাংলাদেশে আর যাই হোক আর খুনের রাজনীতি করার কোন সুযোগ নাই। যারা ৭৫ এর খুনিদের লালন করেছে, প্রশ্রয় দিয়েছে তারাই বাংলাদেশে ২০১৪ সালের পরে শত শত বাস ট্রাক পুড়িয়ে গাছ কেটে রাস্তা অবরোধ করার রাজনীতি করেছে। এই চক্র যাতে বাংলাদেশের শান্ত রাজনীতিকে আবারো অশান্ত কনরতে না পারে সেই লক্ষে প্রত্যেক নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান তিনি।

তিনি বলেন, স্বাধীনতা ২১ বছর পর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দায়িত্ব নেওয়ার পরে পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য তিনি দৃঢ় সংকল্প পরিকল্পনা নিয়ে কাজে হাত দেন। এই অঞ্চল বাংলাদেশের মুল ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলো। সেই পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনতে শেখ হাসিনা এই গুরু দায়িত্ব দিয়েছিলো আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর হাতে।

এই কঠিন দায়িত্ব পালনের জন্য পদে পদে ষড়যন্ত্র ছিল। হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছিলো পাহারে যাতে শান্তি ফিরে না আসে। তবে সকল বাধা পেরিয়ে আজ থেকে ২৪ বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে পার্বত্য শান্তি চুক্তি করা হয়। আজ পাহারে শান্তি ফিরে এসেছে।

এর আগে বরিশাল সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে বেলুন-ফেষ্টুন উড়িয়ে র‌্যালি এবং আলোচনা সভার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

সভায় অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য গোলাম রাব্বানী চিনু, আনিসুর রহমান, বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, বরিশাল সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জেবুন্নেছা আফরোজ, বিসিসি’র প্যালেন মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটুসহ বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ।

আলোচনা সভা শেষে ফজলুল হক এভিনিউ থেকে এক বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে সদর রোডে শহীদ সোহেল চত্বরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়। র‌্যালির অগ্রভাগে থেকে পাতাকা হাতে নেতৃত্ব দেন সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। এসময় কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন