নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: August 25, 2022
গত আট মাস ধরে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না বরগুনার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর আউট অব চিলড্রেন এডুকেশন কর্মসূচির ২৮০ জন শিক্ষক। বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবনজাপন করতে হচ্ছে শিক্ষক ও তাদের পরিবারকে। প্রকল্প বাস্তবাছু সংস্থা আর.ডি.এফ’র এর দাবি জেলা এবং উপজেলা প্রশাসনের উদাসিনতায় আটকে আছে তাদের বেতন-ভাতা।
তবে উন্নয়ন সংস্থাটির বিরুদ্ধেও প্রকল্পের জরিপ কার্যক্রমের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এর ফলে বরগুনায় বন্ধ হতে বসেছে ঝড়েপড়া ও কর্মজীবী শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম। তাই যত দ্রুত সম্ভব বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝড়েপড়া শিক্ষার্থী এবং কর্মজীবী শিশুদের স্কুলমুখী করার লক্ষ্যে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো আউট অব চিলড্রেন এডুকেশন কর্মসূচি প্রকল্প গ্রহণ করেন। যা বাস্তবায়ণে কাজ করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আরডিএফ। এই কর্মসূচির আওতায় বরগুনা সদর উপজেলা, পাথরঘাটা, আমতলী ও তালতলী উপজেলায় ২৮০টি স্কুল চালু করা হয়েছে।
প্রতিটি স্কুলে একজন করে চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। চলতি বছরে জানুয়ারি মাস থেকে বরগুনার প্রকল্প বাস্তবায়নকারী এনজিও আরডিএফ এই শিক্ষকদের নিয়োগ প্রদান করে। যেখানে প্রতিটি স্কুলে একজন শিক্ষার্থীকে একটি স্কুল ব্যাগ, নয়টি খাতা, তিনটি পেন্সিল, দুটি রাবার ও আর্ট করার জন্য এক ডজন রং পেন্সিল দেয়া হয়।
এদিকে, অভিযোগ উঠেছে, ‘শিক্ষকরা নিয়মিত শিশুদের ক্লাস কার্যক্রম পরিচালনা করে আসলেও সঠিকভাবে তাদের বেতন দেয়া হচ্ছে না। বরগুনা জেলার চার উপজেলায় নিয়োগপ্রাপ্ত ২৮০ জন শিক্ষকের দাবি গত ৮ মাস ধরে তারা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। এমনকি প্রকল্পভুক্ত বিদ্যালয়ে আসা ঝরেপড়া শিশুদের প্রতি মাসে বৃত্তির টাকা দেয়ার কথা থাকলে তাও দেয়া হচ্ছে না। এতে শিশুদের মধ্যে বিদ্যালয়ে আসায় অনীহা সৃষ্টি হয়েছে। আবার যে ঘর ভাড়া নিয়ে শিখনকেন্দ্র পরিচালনা করা হচ্ছে, সেই ঘরের ভাড়া পরিশোধ করতে না পারায় কথা শুনতে হচ্ছে শিক্ষকদের।
পাথরঘাটা উপজেলার ভুক্তভোগী শিক্ষিকা আসমা আক্তার বলেন, আরডিএফ কর্তৃপক্ষ আমাদের বেতন-ভাতাদি, বিদ্যালয়ের ঘর ভাড়াসহ উপকরণ দেয়ার কথা থাকলেও সাত মাস পর্যন্ত তা দেননি। নিয়োগপত্রে পাঁচ হাজার টাকা সম্মানি-ভাতা দেয়ার কথা উল্লেখ করা হলেও শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আট মাসের বেতন-ভাতা ও স্কুল ঘরের ভাড়া না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা আরডিএফ। ভাড়া না দেয়ায় ঘর মালিকরা আমাদের ঘর ছেড়ে দেয়ার নোটিশ দিয়েছেন।
বরগুনা সদর উপজেলার অপর একজন ভুক্তভোগী শিক্ষিকা মোসা. পারভিন বলেন, আউট অফ স্কুল চিলড্রেন প্রকল্পে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে আট মাস ধরে আমরা কোন বেতন-ভাতা এমনকি শিখন স্কুলের ভাড়া পর্যন্ত দেয়া হয়নি। আমাদের এখন চলতে কস্ট হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘২০২১ সালে ঝড়েপড়া শিশুদের খুঁজে বের করতে আমাদেরকে দিয়ে জরিপ করানো হয়। সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এখন একটাই দাবি আমরা যেন আমাদের বকেয়া বেতন-ভাতা পেতে পাই।
শিখন কেন্দ্রের ঘর মালিক কবির বলেন, আমাকে ঘর ভাড়া বাবদ প্রতিমাসে দেড় হাজার টাকা করে দেয়ার কথা বলেছিলো আরডিএফ এনজিও। কিন্তু আজ আট মাস হয়ে গেছে, একটি টাকাও দেয়নি। এইভাবে চলতে থাকে আমার ঘর ছেড়ে দিতে বাধ্য করা ছাড়া উপায় থাকবে না।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আর.ডি.এফ’র বরগুনার যুগ্ম পরিচালক এনামুল হক বলেন, ‘এ প্রকল্পের বেতন-ভাতার বিষয়টি আমাদের হাতে নয়। এটি সম্পূর্ণ উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর হাতে। তারাই সরাসরি শিক্ষকদের ব্যাংক হিসাব নম্বরে বেতন-ভাতা পরিশোধ করে থাকেন। আমাদের দায়িত্ব শুধুমাত্র প্রকল্প বাস্তবাছু করা।
তিনি বলেন, ‘প্রকল্পটি পরিচালনার জন্য একটি সার্ভে করা হয়। যেটা পর্যবেক্ষণ করেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। পরে সেই সার্ভে রিপোর্ট আমরা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোতে পাঠাই। সেখান থেকে আবার ভেরিয়েনটেশন রিপোর্টের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জেলা প্রশাসকদের কাছে পাঠানো হয়। নিয়ম অনুযায়ী তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই রিপোর্ট দেয়ায় আমাদের শিক্ষকদের বেতন-ভাতাও আটকে আছে।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর উপপরিচালক জিহাদুল ইসলাম জিহাদ বলেন, ‘আমরা এখনও পর্যন্ত ভেরিয়েনটেশন রিপোর্ট হাতে পাইনি যে কারণে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী এনজিওকে দিতে পারি নি। ভেরিয়েনটেশন রিপোর্ট হাতে না পাওয়ায় গত অর্থ বছরে শিক্ষকদের বেতন-ভাতার টাকা ফেরত পাঠাতে হয়েছে।
এর আগে ২০২১ সালে ঝরেপরা শিশুদের খুঁজে বের করার জন্য যে জরিপ করা হয়েছে সেই ভাতার টাকা কেন আজঅবধি দেয়া হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই ভাতাটি প্রদান না করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের চিঠি দেয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত যাতে এই ভাতার টাকা না দেয়া হয়।’
এ প্রসঙ্গে বরগুনার জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এটি আমাদের অফিসিয়াল ব্যাপার। আর অফিসিয়াল ব্যাপার কেন বাইরে বলবো। আমাদের যখন সময় হবে তখন আমরা রিপোর্ট দিবো।’